
নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ‘নির্বাচনী পর্ষদ-২০২৫’-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রোববার (৩ আগস্ট) নৌবাহিনী সদর দপ্তরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই কার্যক্রমের সূচনা হয়।
এ উপলক্ষে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এই নির্বাচনী পর্ষদের মাধ্যমে পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নৌবাহিনীতে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার থেকে কমান্ডার, কমান্ডার থেকে ক্যাপ্টেন এবং ক্যাপ্টেন থেকে কমডোর পদে কর্মকর্তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু হয়। একইসঙ্গে বিমানবাহিনীতে স্কোয়াড্রন লিডার থেকে উইং কমান্ডার, উইং কমান্ডার থেকে গ্রুপ ক্যাপ্টেন এবং গ্রুপ ক্যাপ্টেন থেকে এয়ার কমডোর পদে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি কার্যক্রমও শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে প্রথমেই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সংঘটিত মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের শহীদ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, সব শ্রেণি-পেশার মুক্তিযোদ্ধা এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী শুধু সশস্ত্র সংঘাত নয়, বরং প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা জাতীয় প্রয়োজনে সবসময় সাহসিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দেশের পাশে দাঁড়িয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “২০২৪ সালের গণআন্দোলন পরবর্তী নিরাপত্তা সংকটে নৌ ও বিমানবাহিনী জনতার পাশে থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণ করে জনগণের ভালোবাসা ও আস্থা অর্জন করেছে।”
সমুদ্রসম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং গভীর সমুদ্রবন্দরসহ সুনীল অর্থনীতি বিকাশে নৌবাহিনীর অবদান তুলে ধরে তিনি দক্ষ মানবসম্পদ গড়ার ওপর জোর দেন। পাশাপাশি মহেশখালী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা এবং উপকূলীয় অঞ্চলের উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী শুধু নিরাপত্তায় নয়, বরং শিক্ষা ও মানবিক খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। ভবিষ্যতেও তারা সংবিধান রক্ষায় ও দুর্যোগে জনগণের পাশে থাকবে বলে আমি আশাবাদী।”
নির্বাচনী পর্ষদের উদ্দেশ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “জাতির জন্য একনিষ্ঠ, দক্ষ, সৎ, পেশাদার, মানবিক ও নেতৃত্বের গুণাবলি সম্পন্ন কর্মকর্তা নির্বাচনই এই পর্ষদের প্রধান লক্ষ্য।”
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ। তারা যৌথভাবে জানান, প্রধান উপদেষ্টার দিকনির্দেশনা ও অংশগ্রহণ বাহিনীর সদস্যদের মনোবল ও কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি করেছে। তারা বলেন, “নতুন নেতৃত্ব গঠনে দেশপ্রেম, পেশাগত দক্ষতা ও মানবিক নেতৃত্বের ভিত্তিতে যোগ্য কর্মকর্তাদের নির্বাচনের অঙ্গীকারে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সামরিক ও বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। শেষে, প্রধান উপদেষ্টা নৌবাহিনী সদর দপ্তরের প্রাঙ্গণে একটি গাছের চারা রোপণ করে নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী এবং দেশের কল্যাণ কামনা করেন।