
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে শত শত শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করে। বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে বহু প্রাণহানি ও আহতের ঘটনায় শোকাহত শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবি উত্থাপন করে এ কর্মসূচির আয়োজন করেন।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সাফ জানিয়ে দেন, দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটের মধ্যে যদি সরকারের কোনো প্রতিনিধি এসে তাদের সঙ্গে দাবি নিয়ে আলোচনা না করেন, তাহলে তারা উত্তরা বিএনএস সেন্টার সংলগ্ন সড়ক অবরোধ করবেন। শিক্ষার্থীদের দাবি শুধু বক্তব্যে নয়, তাদের দাবিগুলোর বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, “আমরা বুঝে গেছি, সরকারের তরফ থেকে আমাদের কথা শোনা হবে না। তাই আমরা সাড়ে বারোটার মধ্যে সরকারকে সময় দিচ্ছি। যদি কেউ না আসে, তাহলে আমরা সড়কে বসে আন্দোলনে যাব। অন্যথায়, কেউ আমাদের কথা শুনবে না।”
এর আগে, ‘বিচার চাই না, সন্তানের লাশ চাই’, ‘সঠিক লাশের হিসাব চাই’ এই ধরনের ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে শিক্ষার্থীরা গোলচত্বরে অবস্থান নেন এবং রাস্তার ওপর বসে পড়ে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি চালিয়ে যান। এ সময় পুলিশ বারবার সরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানালেও শিক্ষার্থীরা অনড় থাকেন।
আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, “আমরা কোনো সংঘর্ষ বা সহিংসতা চাই না। কিন্তু যারা এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমরা এর বিচার চাই, ন্যায়ের দাবি জানাই।”
শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির মধ্যে রয়েছে :
১. নিহতদের নাম ও সঠিক পরিচয় প্রকাশ
২. আহতদের পূর্ণাঙ্গ ও নির্ভুল তালিকা প্রকাশ
৩. শিক্ষকদের সঙ্গে সেনাসদস্যদের অসদাচরণের জন্য প্রকাশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা
৪. নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ
৫. ঝুঁকিপূর্ণ ও পুরনো প্রশিক্ষণ বিমান বাতিল
৬. বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ এলাকা ও পদ্ধতি পুনর্বিন্যাস
উল্লেখ্য, সোমবার (২১ জুলাই) দুপুর ১টার কিছু পর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি এফ-৭বিজিআই প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়। সঙ্গে সঙ্গে বিমান ও ভবনে আগুন ধরে যায়। ভবনে থাকা অনেক শিক্ষার্থী নিহত ও আহত হন।
ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরে উদ্ধার অভিযানে যোগ দেয় বিজিবি ও সেনাবাহিনী। আহতদের হেলিকপ্টারে করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সর্বশেষ তথ্যমতে, নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭ জনে এবং ৭৮ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।