
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভোট দিয়েছে ভারত। ‘নিউইয়র্ক ঘোষণা’ নামে পরিচিত এই প্রস্তাবটি বিপুল সমর্থনে গৃহীত হয়েছে—১৪২টি দেশ পক্ষে, ১০টি দেশ বিপক্ষে এবং ১২টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত ভোটাভুটির তথ্য শনিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতসহ সব উপসাগরীয় আরব দেশ প্রস্তাবের পক্ষে অবস্থান নেয়। তবে বিরোধিতা করেছে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনা, হাঙ্গেরি, মাইক্রোনেশিয়া, নারু, পলাউ, পাপুয়া নিউগিনি, প্যারাগুয়ে এবং টোঙ্গা।
প্রস্তাবটির শিরোনাম ছিল— “প্যালেস্টাইন প্রশ্নের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের বাস্তবায়ন বিষয়ে নিউইয়র্ক ঘোষণা।” এটি মূলত গত জুলাইয়ে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ফ্রান্স ও সৌদি আরবের সহ-সভাপতিত্বে আয়োজিত এক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে বিতরণ করা হয়। ওই সম্মেলনের লক্ষ্য ছিল ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটের সমাধানে দীর্ঘদিনের স্থবির আলোচনা পুনরায় শুরু করা।
সাত পৃষ্ঠার ঘোষণাপত্রে বিশ্বনেতারা গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করা, দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়ন এবং ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের জন্য শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে সমষ্টিগত পদক্ষেপের আহ্বান জানান।
এতে একদিকে ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলাকে নিন্দা জানানো হয়, যেখানে প্রায় ১২০০ মানুষ নিহত এবং ২৫০ জনের বেশি জিম্মি হয়েছিলেন। অন্যদিকে গাজায় ইসরায়েলের পাল্টা অভিযানে ব্যাপক বেসামরিক হতাহত, অবকাঠামো ধ্বংস ও মানবিক বিপর্যয়ের কঠোর সমালোচনা করা হয়।
ঘোষণায় ইসরায়েলি নেতৃত্বকে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানে প্রকাশ্যে অঙ্গীকার করতে আহ্বান জানানো হয়, যাতে একটি স্বাধীন ও টেকসই ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। পাশাপাশি বসতি স্থাপন, ভূমি দখল, সংযুক্তিকরণ পরিকল্পনা এবং সহিংসতা বন্ধের দাবি জানানো হয়। ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের প্রতিও পুনর্ব্যক্ত সমর্থন দেওয়া হয়।
এতে স্পষ্ট বলা হয়, “গাজার যুদ্ধ এখনই শেষ হতে হবে।” গাজাকে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে পশ্চিম তীরের সঙ্গে একীভূত করার আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে দখল, অবরোধ, ভূখণ্ড সংকোচন কিংবা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি মেনে নেওয়া হবে না বলে জানানো হয়।
প্রস্তাবটি সমর্থন করে সম্প্রতি ফিনল্যান্ডও যুক্ত হয়েছে এবং একে বছরের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। যদিও দেশটি এখনো ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। অন্যদিকে ফ্রান্স ও বেলজিয়াম ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
আগামী ২২ সেপ্টেম্বর রিয়াদ ও প্যারিসের যৌথ সভাপতিত্বে সাধারণ পরিষদের অধিবেশন বসবে। সেখানে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বর্তমানে জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে ১৪৯টি দেশ ইতোমধ্যেই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।