
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের দিকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। শুরুতে উখিয়া-টেকনাফের শরণার্থী শিবিরে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেন; এখন সেই সংখ্যা ১২ লাখ ছাড়িয়েছে। ৮ বছর পেরিয়ে গেলেও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন এখনও আলো দেখেনি।
সম্প্রতি রাখাইনের আর্মির নিয়ন্ত্রণ সম্প্রসারণ ও জান্তার সঙ্গে সংঘাত, ত্রাণ তহবিলের অভাবসহ নানা কারণে প্রত্যাবাসনের আশা রোহিঙ্গাদের কাছে কঠিন হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে, ৩৩টি শিবিরের রোহিঙ্গারা নিজেদের অধিকার, মর্যাদা এবং স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আকাঙ্খা প্রতিষ্ঠার জন্য অনানুষ্ঠানিক ভোটের মাধ্যমে পাঁচজন নেতাকে নির্বাচিত করেছেন।
শনিবার (১৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি কমিউনিটি সেন্টারে সামাজিকভাবে প্রতিনিধিত্বশীল রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণে বিভিন্ন ধাপের ভোটাভুটির মাধ্যমে নির্বাচিত পাঁচজনের নাম ঘোষণা করা হয়।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান জানান, “কিছুদিন আগে একটি নাগরিক সমাজ সংগঠন গঠনের অনুমতির জন্য তারা আমাদের কাছে আবেদন করেছিলেন, যা আমরা অনুমোদন করেছি।”
এই প্রক্রিয়া শুরু হয় ১৬ জুলাই, যখন উখিয়ার ১৪ থেকে ১৬ নং ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা তাদের মতামত প্রদানের মাধ্যমে ভোটাভুটিতে অংশ নেন। এক মাস ধরে ৩৩টি ক্যাম্পকে ৮টি জোনে ভাগ করে মোট ৩ হাজার ৫০০ জন রোহিঙ্গা ৫০০ জন কাউন্সিলর নির্বাচিত করেন। এরপর এই ৫০০ জন কাউন্সিলরের মধ্য থেকে ২৬ জনকে চূড়ান্ত নির্বাহী কমিটির জন্য মনোনীত করা হয় এবং শনিবার তাদের মতামতের ভিত্তিতে পাঁচজন চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হন।
নির্বাচিতরা হলেন—
১৫নং ক্যাম্পের মৌলভি সৈয়দ উল্লাহ
১৩নং ক্যাম্পের খিন মং
১নং/ইস্ট ক্যাম্পের জাহাঙ্গীর আলম
১নং/ওয়েস্ট ক্যাম্পের মোহাম্মদ শোয়াইফ
১৫নং ক্যাম্পের সাজেদা বেগম
মৌলভি সৈয়দ উল্লাহ, মোহাম্মদ শোয়াইফ ও সাজেদা বেগম রাখাইনের বুথিডং টাউনশিপের এবং খিন মং ও জাহাঙ্গীর আলম মংডু টাউনশিপের বাসিন্দা।
নির্বাচিতদের নাম ঘোষণা করেন রোহিঙ্গা কমিউনিটি শিক্ষক মাস্টার মোহাম্মদ কামাল। তিনি জানান, নির্বাচিতদের মধ্যে মৌলভি সৈয়দ উল্লাহ প্রথম ছয় মাস নেতৃত্ব দেবেন এবং বাকি সদস্যরা পর্যায়ক্রমে ছয় মাস করে সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন।
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মৌলভি সৈয়দ উল্লাহ ছিলেন প্রয়াত রোহিঙ্গা নেতা মহিবুল্লাহর সংগঠন ‘আরকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এন্ড হিউম্যান রাইটস’-এর সদস্য। তিনি এর আগে ক্যাম্পে ‘গো হোম ক্যাম্পেইন’-এর মতো প্রত্যাবাসনের দাবিতে কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
সৈয়দ উল্লাহ বলেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য হলো অধিকার, মর্যাদা ও সমতার সঙ্গে নিজেদের মাতৃভূমি আরাকানে প্রত্যাবাসনের স্বপ্ন পূরণ করা। সে লক্ষ্যে আমরা একত্রিত হয়ে নতুন যাত্রা শুরু করেছি।”
রোহিঙ্গা অধিকারকর্মী খিন মং বলেন, “আমাদের দায়িত্ব হলো আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে যুক্ত থাকা, ক্যাম্পে শান্তি বজায় রাখা এবং শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া। আমরা সম্মিলিত প্রয়াস অব্যাহত রাখব।”
নতুন কমিউনিটি নেতৃত্বকে শিবিরের রোহিঙ্গারা উষ্ণভাবে স্বাগত জানিয়েছেন। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কমিউনিটির পক্ষ থেকে নির্বাচিত নেতাদের অভিনন্দন জানানো হয়েছে। এছাড়া এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে আরকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল কংগ্রেস।