
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে নিজ বাসভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। সেই মর্মান্তিক ঘটনার ৫০ বছর পূর্ণ হয়েছে। এ উপলক্ষে ১৫ আগস্ট দেশজুড়ে বহু মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করেছেন।
তবে সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করেছেন ১৬ আগস্ট। কেন তিনি একদিন পরে পোস্ট দিয়েছেন, সে ব্যাখ্যা মিলেছে তার ফেসবুক পোস্টেই।
পোস্টের আগে প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ করা যায়, ১৪ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম ঘোষণা দিয়েছিলেন, ১৫ আগস্ট কেউ কোনো কর্মসূচি পালন করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বক্তব্য ঘিরে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
এই প্রেক্ষাপটে সায়ান ১৬ আগস্ট নিজের ফেসবুক ওয়ালে লেখেন, “প্রেস সচিব বলেছেন, ১৫ই অগাস্ট কোন কর্মসূচী পালন করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর মানে বোধহয় এই যে, অন্য সকল দিন স্মরণে বাধা নাই। আজ ১৬ অগাস্ট। তাহলে প্রেস সচিবকে পরম শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ ১৬ অগাস্টে কিছু কথা বলা যাক।”
পোস্টে তিনি আরও লেখেন, “আজ মহান ১৬ই অগাস্ট। আজ থেকে ৫০ বছর আগে, ঠিক এই দিনটিতে, (অনেক বা অন্তত কিছু) মানুষ হতভম্ব হয়ে ছিল। কারণ তার ঠিক আগের দিনই, শেখ মুজিব নির্মমভাবে হত্যাকান্ডের শিকার হন। শেখ মুজিব ৭০-এর নির্বাচনে বিপুলভোটে বিজয়ী হওয়া সত্ত্বেও পশ্চিম পাকিস্তানিরা নির্বাচনের সেই ফলাফল অন্যায্যভাবে অস্বীকার করে। তার আগে পর্যন্তও তিনিই ছিলেন বাংলার মানুষের অন্যতম প্রধান অধিকারের আওয়াজ। আরও মানুষ ছিলেন। ভাসানী তো অবশ্যই ছিলেন। কিন্তু এখন যে সময়টার কথা বলছি, তখন শেখ মুজিবই বাংলার মানুষের প্রধানতম শক্তিমান কণ্ঠস্বর।”
তিনি যোগ করেন, “পশ্চিম পাকিস্তানীরা যখন মুজিবের এই বিপুল বিজয়কে অস্বীকার করলো, সেই সময়েই মানুষের মনে ক্ষোভ আরও তীব্রভাবে দলা পাকিয়ে উঠতে থাকে এবং আমাদের ইতিহাস আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের দিকে আরো ঘনীভূত যাত্রা শুরু করে।”
সায়ান লেখেন, “পরবর্তীতে পাকিস্তানীরা অতর্কিতে এই দেশের মানুষকে আক্রমণ করলে, সেই জনপ্রতিরোধ যুদ্ধের শুরুতেই জিয়াউর রহমান শেখ মুজিবের নামেই স্বাধীনতা সংগ্রাম ঘোষণা করেন। ( সংশোধিত : শুরুতে না হলেও পরে তিনি মুজিবের নামেই ঘোষণা দেন)। তাজউদ্দীন তার চরম সাহসী নেতৃত্ব নিয়ে ভীষণ প্রতিকুলতার মধ্যেও আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে যখন গুছিয়ে উঠছেন, তার সাথে তখন তার প্রাণপ্রিয় মুজিব ভাই নাই। তিনিও শেখ মুজিবের নামেই মুজিবনগর সরকার গঠন করেন।”
তিনি আরও বলেন, “মুজিব অনেক সময়ই অনেককে বাদ দিয়ে ভাবতে পেরেছেন। কিন্তু মুজিবকে বাদ দেবার কথা কেউ ভাবে নাই কোনদিন। মুজিব মানুষের এতই প্রিয় ছিলেন, এতই ভরসার ছিলেন এবং এতই অনস্বীকার্য ছিলেন। বাংলাদেশের সকল মুক্তিযোদ্ধা অন্তরে শেখ মুজিবের প্রেরণাকে ধারণ করে জীবনকে বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।”
তিনি আরও লিখেছেন, “এগুলো ইতিহাস। মানুষ তার নেতাকে সম্মান জানাবে, ফুলের তোড়া দিয়ে ভালোবাসা জানাবে, এগুলোকে যারাই দমন করতে চাইবেন, তাদের এটুকু বলার আছে, ভালোবাসারে, স্মরণরে কেউ ‘দাবায়া রাখতে পারবা না!’”
তিনি বলেন, “এখন নাগরিকের স্মরণ এবং শ্রদ্ধা নিবেদনের কর্মসূচীকে সীমিত করতে যেহেতু ১৫ তারিখ তা পালন করলে প্রেস সচিব ব্যবস্থা নেবেন বলেছেন, তাই স্মরণের কর্মসূচীকে ১৫ তে সীমিত না রেখে, ১৬, ১৭, ১৮ তে বছরব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া ছাড়া কিছু করার নাই। জনগণ চিরকালই প্রেস সচিবদের চেয়ে শক্তিমান, সেটা প্রেস সচিবদের মনে থাকতে চায় না।”
তিনি আরও লেখেন, “সবচেয়ে হাস্যকর হলো, তিনি সত্যিই মনে করেন, মানুষের ভালোবাসায় মিলিটারির বেড়ি পরানো সম্ভব। ক্ষমতার কাছে গেলেই কেন মানুষের বুদ্ধিসুদ্ধি হাঁটুতে নামতে শুরু করে জানিনা। শেখ মুজিবকে অনেকেই পাগলের মত, দেবতার মত ভালো না বাসতে পারেন। তার জন্য বছরের পর বছর জোরপূর্বক শোক পালনে কাউকে বাধ্য করা হলে, সেটা কাজ করে নাই, এভাবে শোক হয় না। শোক ভালোবাসা সবই ব্যক্তিগত। চাপিয়ে দিয়ে লাভ নাই। কিন্তু শেখকে মুছে ফেলতেও পারবেন না। সে বাংলাদেশের ইতিহাসের একমাত্র অংশ না হলেও বিরাট অংশ এবং অনস্বীকার্য অংশ। আর তাকে যারা ভালোবাসে, তারাও তাকে শ্রদ্ধা জানাবে, কর্মসূচি পালন করবে। সেটাই স্বাভাবিক।”
পোস্টের একেবারে শেষে সায়ান লিখেছেন, “যাই হোক, আজ ১৬ই অগাস্ট, মুজিবকে স্মরণ করে কোন কর্মসূচী নিলে, প্রেস সচিব বলেছেন, কোন সমস্যা নাই। আজ থেকে ঠিক ৫০ বছর একদিন আগে মুজিব নিহত হন।”