
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেছেন, গণঅধিকার পরিষদের কার্যালয়ের সামনে নুরুল হক নুরকে সেনা ও পুলিশ সদস্যদের মারধরের ঘটনা ভয়ংকর এবং উদ্বেগজনক। তিনি বলেন, এই ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। তার ভাষায়, "জাতীয় পার্টি হচ্ছে ভারতের দালাল এবং চব্বিশের পরাজিত শক্তি। একটি পরাজিত শক্তিকে রক্ষা করতে গিয়ে গণঅভ্যুত্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলের অফিসে হামলা চালানো হলো, অথচ এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।"
রোববার (৩১ আগস্ট) বেলা ১১টায় মেহেরপুর জেলা পরিষদের হলরুমে জেলা-উপজেলা সমন্বয়ক কমিটির সদস্যদের অংশগ্রহণে আয়োজিত সাংগঠনিক সভা ও রাজনৈতিক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।
সরোয়ার তুষার অভিযোগ করেন, বর্তমান সরকার নিজের কর্তৃত্ব সম্পর্কে সচেতন নয়। তিনি বলেন, “এই সরকারের প্রধান সমস্যা হলো, এরা জানে না যে তারা সরকার। সরকারের কোনো কর্তৃত্ব নেই।” তিনি উল্লেখ করেন, নুরুল হক নুরকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে উপদেষ্টারা তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন, কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। “সাধারণত রাজনৈতিক দলগুলো বিবৃতি দেয়, আর সরকার ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু ড. মোহাম্মদ ইউনূসের সরকার শুধু বিবৃতি দেয়, অথচ কাজের জায়গায় পদক্ষেপ নেয় না।”
জুলাই সনদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই সনদ ভবিষ্যৎ নির্বাচিত সরকারের হাতে তুলে দিলে তা বাস্তবায়ন হবে না। “যে কোনো মূল্যে নির্বাচনের আগেই এই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে। এর ভিত্তিতেই নির্বাচন হতে হবে। পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের হাতে জুলাই সনদ তুলে দেওয়ার অর্থ হচ্ছে ‘শিয়ালের কাছে মুরগি ধার দেওয়া।’” তিনি আরও জানান, বর্তমানে অনেক রাজনৈতিক দল কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে ঐকমত্যে পৌঁছেছে, যার মধ্যে একজন ব্যক্তি দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়ার প্রস্তাব অন্যতম। “এই সংস্কার যদি এখনই না করা যায়, তাহলে পরবর্তীতে এটি আর বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।”
সংবিধান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর চাপিয়ে দেওয়া সংবিধান প্রণয়নের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের কোনো আইনগত এখতিয়ার ছিল না। “এই সংবিধানে একজন ব্যক্তিকে এমনভাবে ক্ষমতাবান করা হয়েছে যে, জনগণের মৌলিক অধিকার খর্ব হয়েছে। সরকারকে একচেটিয়া ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আর শর্তসাপেক্ষে জনগণের হাত-পা বেঁধে ফেলা হয়েছে।” তিনি দাবি করেন, রাজনৈতিক দলগুলো আজও জনগণকে একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান উপহার দিতে ব্যর্থ।
নির্বাচন কমিশন সংস্কারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “কীভাবে, কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে তা এখনও আলোচনার টেবিলে। অথচ প্রধান নির্বাচন কমিশনার রোডম্যাপ ঘোষণা করে দিয়েছেন।” তার মতে, বর্তমান কমিশনের পক্ষে কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, তাই দ্রুত এই কমিশন সংস্কার করতে হবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) মোল্লা রহমাতুল্লাহ, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট সাকিল আহমাদ, কেন্দ্রীয় সদস্য সোহেল রানা, মেহেরপুর জেলা ও উপজেলা সমন্বয়ক কমিটির সদস্যরা।
পরে বিকেল ৪টায় মুজিবনগর কমপ্লেক্সের পর্যটন মোটেলে এনসিপির মেহেরপুর জেলা শাখার উদ্যোগে একটি উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন অ্যাডভোকেট সাকিল আহমাদ এবং কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় জনগণ অংশ নেন।