কুমিল্লায় দেশি অস্ত্র হাতে কিশোর গ্যাংয়ের ‘মিছিল’, আটক ৩


MARCH NAEEM 2ND/comilla-gang-250425-02-1745610775.jpg

কুমিল্লা শহরের তিনটি এলাকায় দেশি অস্ত্র হাতে মিছিল করেছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।

শুক্রবার বিকালে এ ঘটনার পর চাকু-অ্যান্টিকাটারসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত নগরীর কান্দিরপাড় এলাকার রানীর দিঘীর পাড়, তালপুকুরপাড় ও আদালতপাড়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা স্লোগান দিয়ে এগিয়ে যেতে দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

তাদের অনেকের হাতেই ছিল দেশি অস্ত্র। এ সময় সড়কের দুই পাশে সাধারণ মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন।

একই সময়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শাখায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে রানীর দিঘীর দক্ষিণপাড়ে কয়েকশত কিশোরকে দেশি অস্ত্র হাতে ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। কলেজ কেন্দ্রের বাইরে রানীর দিঘিরপাড়ে অপেক্ষায় থাকায় অভিভাবকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

“এটা অন্তত আতঙ্কের বিষয়। অথচ এখানে প্রশাসনের কোনো লোকজন নেই, প্রশাসন কোথায় গেল। এমন পরিস্থিতি কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।”

পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসি সদস্য রহমত বিন হানিফ ঘটনা বর্ণনা করে নিজের ফেইসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, “আজ ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে বিএনসিসির হয়ে ডিউটি দিয়েছিলাম কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পরীক্ষার সময়ে বাহিরে থেকে মিছিলের শব্দ শুনতে পেলাম। শব্দ শুনে দ্রুত বাহিরে আসলাম। এসে দেখি অনেকগুলো ছোট ছোট ছেলে। তাদের বয়স সর্বোচ্চ ১৬ বছর হবে। তাদের অনেকের হাতে রামদা, চুরি, চাপাতি দেখেছি। তারা আতশবাজিও ফোটাচ্ছিল।

“তাদের কাছে গিয়ে বললাম এখানে পরীক্ষা চলছে এভাবে আওয়াজ করবেন না। তারা আমাকে তাাদের অস্ত্রগুলো দেখিয়ে আরও বেশি আওয়াজ করে ছুটে চললো। তারপর পুলিশের কাছে যখন এই ব্যাপার বললাম, তারা এই ব্যাপারে একটুও মাথা ঘামালো না।”

একাধিক অভিভাবক বলেন, এমন আতঙ্কজনক পরিস্থিতি দেখে তারা চিন্তায় পড়ে যান। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিন ইশরাক মিজার বলেন, “৫ অগাস্ট পরবর্তী সময়ে কুমিল্লা শহরে কিশোর গ্যাংয়ের তাণ্ডব আশংকাজনকভাবে বেড়েই চলছে। এক্ষেত্রে কুমিল্লার প্রশাসনের নীরবতা এর প্রধান কারণ বলে আমি মনে করি। কেননা এরকম ঘটনা এখন প্রায়শই ঘটছে কিন্তু প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর ব্যাবস্থা নিচ্ছে না।”

তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে দু'একজনকে ধরা হচ্ছে। কিন্তু তারা আবার কিছুদিন পর ‘ছাড়া’ পেয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে তাদের যারা আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছে তারা পুরোপুরি নাগালের বাইরেই রয়েছে।

“এমন অবস্থা চলতে থাকলে এ শহর আরো অনিরাপদ হয়ে উঠবে বলে আমি আশংকা করি। শহরের এ সমস্যা নিরসনে আমি দ্রুততম সময়ে কঠোর ব্যাবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।”

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল হাকিম বলেন, “আমি এই ঘটনা জানার সাথে সাথেই সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। উনারা যথাযথ পদক্ষেপ নিবেন বলে জানিয়েছেন।”

তালপুকুরপাড় এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, বিকালে এক থেকে দেড়শ কিশোর ছেনি, রামদা ও চাপাতি হাতে এলাকায় আসে এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে গোটা এলাকার মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আদালতপাড়ায় কিশোর গ্যাং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সড়কে নেমে আসে। এ সময় চলাচলরত যানবাহনের চালকরা ভয়ে সড়কের পাশে অবস্থান নেন।

কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মহিনুল ইসলাম বলেন, “শহরের বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের মহড়ার খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযানে নেমে পড়ে।

“এসময় একটি গ্রুপের মহড়ায় ধাওয়া করে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। বাকিরা পালিয়ে গেছে। তাদের কাছ থেকে ছুরি, চাকু এন্টি কাটার উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের অভিযান চলছে।”

তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট এলাকায় থাকা ক্লোজ সার্কিট (সিসি) টিভির ভিডিও দেখে অস্ত্রধারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হবে।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×