.jpg)
চট্টগ্রাম নগরীতে দিনের আলোয় প্রাইভেটকার থামিয়ে দুই কাস্টমস কর্মকর্তার ওপর হামলা চালিয়েছে তিন যুবক। এ সময় হামলাকারীদের একজনকে লক্ষ্য করে আরেকজনকে ‘গুলি কর, গুলি কর’ চিৎকার করতে শোনা গেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ডবলমুরিং থানার সিডিএ আবাসিক এলাকার ১ নম্বর সড়কের চৌধুরী সুপার শপের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
হামলার শিকার দুই কর্মকর্তা হলেন- রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান খাঁন এবং সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা বদরুল আরেফিন ভূইয়া। দ্রুত গাড়ি চালিয়ে স্থান ত্যাগ করায় তারা প্রাণে বেঁচে যান, তবে তাদের প্রাইভেটকারের কাচ ভেঙে যায়।
কাস্টমস কর্মকর্তারা মনে করছেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন অনিয়ম উদ্ঘাটনের পর থেকেই তারা নিয়মিত হুমকি পাচ্ছিলেন। দুই মাস আগে থানায় একটি জিডিও করেছিলেন। তাদের ধারণা- এই ঘটনারই পরিণতি বৃহস্পতিবারের হামলা।
হুমকি পাওয়ার বিষয়ে জিডি হলেও দুই মাসে পুলিশ এখনো কাউকেই শনাক্ত করতে পারেনি, যা নিয়ে কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ঘটনার দুইটি সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গেছে। তাতে দেখা যায়, তিন যুবক একটি মোটরসাইকেল নিয়ে কাস্টমস কর্মকর্তাদের গাড়িকে ওভারটেক করে সামনে গিয়ে থামিয়ে দেয়। এরপর দুইজন মোটরসাইকেল থেকে নেমে গাড়ির সামনের যাত্রীপাশে আঘাত করেন। আরেকজন পেছন থেকে বারবার চিৎকার করেন- “গুলি কর, গুলি কর।” কর্মকর্তারা গাড়ি দ্রুত চালিয়ে পালিয়ে গেলে সামনের জানালার কাচ ভেঙে যায়।
ফুটেজে আরও দেখা যায়, ঘটনাস্থল ছাড়ার সময় এক যুবক অন্যজনকে গালিগালাজ করে জিজ্ঞেস করছেন কেন তিনি গুলি করেননি।
বিকেলে আসাদুজ্জামান খাঁন থানায় মামলা করেন। মামলায় তিনি জানান, সকালবেলা তিনি ও বদরুল আরেফিন আগ্রাবাদের শুল্ক গোয়েন্দা দপ্তর থেকে বের হয়ে একটি ভাড়ায় চালিত প্রিমিও প্রাইভেটকারে ওঠেন। সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে ‘রয়েল অটো কেয়ার’-এর সামনে পৌঁছালে পিছন থেকে একটি মোটরসাইকেল তাদের পথরোধ করে। তিনজনের মধ্যে দুইজনের মাথায় হেলমেট থাকলেও একজন ছিলেন হেলমেটবিহীন।
মোটরসাইকেল থামার সঙ্গে সঙ্গেই এক যুবক হাতে থাকা ধারালো চাপাতি দিয়ে ড্রাইভারের পাশের দরজায় কোপ দেন এবং লাথি মারেন, যাতে কাচ ভেঙে যায়। ওই সময় বারবার চিৎকার করে বলা হচ্ছিল- “গুলি কর, গুলি কর।” প্রাণরক্ষার জন্য তারা দ্রুত গাড়ি চালিয়ে কাস্টমস হাউসে চলে যান এবং কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান।
আসাদুজ্জামান বলেন, “বিভিন্ন অনিয়ম চিহ্নিত করে প্রায় প্রতিদিন ১০ থেকে ১২টি মামলা করছি। এজন্য বিভিন্ন অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন করে হুমকি দিতেন। এসব কাজ বন্ধ করতে বলতেন। এমনকি হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল।”
তিনি জানান, গত ৬ অক্টোবর বন্দর থানায় জিডি করেছিলেন। সেখানে উল্লেখ করেছিলেন যে ৫ অক্টোবর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে একজন ফোন করে তাকে ভয়ভীতি ও হত্যার হুমকি দিয়েছে।
কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার মো. তারেক মাহমুদ বলেন, “কিছুদিন আগে সাজ্জাদ পরিচয়ে ফোন করে আসাদুজ্জামানকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন। তবে কোন সাজ্জাদ, তা বলেননি। কাস্টমসে অনিয়ম ধরার কারণেই এই হামলা হতে পারে।”
ডেপুটি কমিশনার এইচ এম কবির বলেন, “ঘটনাটি শোনার পর আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। রাজস্ব কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এটি নিশ্চিত না হলে স্বাভাবিক কাজে ব্যাঘাত ঘটবে।”
জানা গেছে, সম্প্রতি এই দুই কর্মকর্তা বিভিন্ন কনটেইনারে করে আনা নিষিদ্ধ পপি বীজ, ঘন চিনি এবং মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে আনা অন্যান্য পণ্য জব্দ করেছিলেন। তাদের কঠোর অবস্থানের কারণে কসমেটিকস আমদানিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটও বিপর্যস্ত হয়। সেই সিন্ডিকেটই নাম-বেনামে হুমকির পেছনে থাকতে পারে বলে কর্মকর্তাদের অভিযোগ।
ডবলমুরিং থানার বাবুল আজাদ বলেন, “ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছি। তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।”
তবে তিনি দাবি করেন, চাপাতি দিয়ে গাড়ি কোপানোর ঘটনা ঘটেনি; হামলাকারীরা যাত্রীর জানালায় লাথি মেরেছে।
আসাদুজ্জামান খাঁনের জিডি তদন্তকারী বন্দর থানার এসআই জাহিদ হাসান শান্ত বলেন, “জিডিটি তদন্তের পর্যায়ে আছে। আমরা এখনো কাউকে শনাক্ত করতে পারিনি। কারা হুমকি দিয়েছে সেটি শনাক্তের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”