
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় কুষ্টিয়ায় ছয়জনের হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তার পক্ষের আইনজীবীর মাধ্যমে করা আবেদনে তিনি জুলাই বিপ্লবকে ‘সো-কল্ড’ বা তথাকথিত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে প্রসিকিউশন দাবি করছে, এই মন্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার মধ্যে পড়ে।
বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেলের সামনে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। প্যানেলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ। ট্রাইব্যুনালের অপর সদস্য জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
শুনানিতে উপস্থিত হননি ইনুর আইনজীবীরা। পরে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি জানান, ট্রাইব্যুনাল ইতিমধ্যে ইনুর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করার আদেশ দিয়েছেন। সেই আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য ইনু আবেদন করেছেন। আবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান সরকারের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা নেই এবং তারা দাবি করেছেন যে সরকার জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে জনগণের আকাঙ্ক্ষায় গঠিত হয়েছে। এছাড়াও ইনু আদালতকে জানান, সরকার সবাইকে দায়মুক্তি দিচ্ছে, যা চিফ প্রসিকিউটরের মতে সত্য নয় এবং এ ধরনের বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। ট্রাইব্যুনাল এই বিষয়ে এখনও কোনো আদেশ দেননি।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ইনুর সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন ও সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৩০ নভেম্বর দিন ধার্য করেছে ট্রাইব্যুনাল। গত ২ নভেম্বর তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই আদেশ দেন। প্যানেলের চেয়ারম্যান ছিলেন বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী। অন্য দুই সদস্য ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
আদালতে ওইদিন ইনুর বিরুদ্ধে আনা আটটি অভিযোগ পড়ে শোনানো হয়। প্রশ্ন করা হলে তিনি নিজেকে পুরোপুরি নির্দোষ দাবি করেন। ২৮ অক্টোবর তার আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী অভিযোগগুলো পড়ে শোনান এবং একপর্যায়ে জানান, কোনো অভিযোগই সত্য নয় এবং ইনুর অব্যাহতির অনুরোধ করেন। একইসঙ্গে ট্রাইব্যুনালকে এই অভিযোগগুলি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখার অনুরোধ জানান।
গত বছরের ২৬ আগস্ট রাজধানীর উত্তরা থেকে পুলিশ ইনুকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন মামলায় কারাগারে রয়েছেন। জাসদ নেতৃরূপে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তথ্যমন্ত্রীর পদও পালন করেছেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়ায় নিজের আসনে জোটের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, কিন্তু আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন।
উল্লেখ্য, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় কুষ্টিয়ায় ছয়জন নিহত হন এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ইনুর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। পরে তদন্ত সংস্থা তাদের প্রতিবেদন দাখিল করে এবং প্রসিকিউশন আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ দাখিল করে।