
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন স্পষ্ট করেছেন যে তিনি ইউরোপের সঙ্গে লড়াই করতে চান না। তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, যদি ইউরোপের কোনো দেশ যুদ্ধের ইচ্ছা প্রকাশ করে, তবে রাশিয়া মুহূর্তের মধ্যে তা মোকাবিলায় প্রস্তুত। মঙ্গলবার, ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভেন উইটকফ এবং জামাতা জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে বৈঠকের আগে পুতিন এ মন্তব্য করেন।
দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানিয়েছে, পুতিন ইউরোপের সরকারগুলোকে শান্তি প্রক্রিয়া ব্যাহত করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। তিনি বলেন, “ইউরোপের দাবি রাশিয়া মেনে নেবে না। কারণ তারা মার্কিন প্রশাসনকে ইউক্রেনে শান্তি স্থাপনে বাধা দিচ্ছে।” পরে মস্কোতে পুতিন উইটকফ ও কুশনারের নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রতিনিধি দলকে মুখোমুখি বৈঠকে অভ্যর্থনা জানান। বিবিসি সেই বৈঠকের ছবি প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা গেছে সকলেই একটানা আলাপরত।
এর আগে, যুক্তরাষ্ট্রের ২৮ দফা খসড়া শান্তি প্রস্তাব ফাঁস হওয়ার পর ইউক্রেন এবং ইউরোপীয় দেশগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করে। অভিযোগ ছিল, খসড়া প্রস্তাবগুলো ন্যাটো, ইউক্রেনের এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ডে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ স্বীকার এবং ইউক্রেনের সেনাবাহিনী সীমিত করার মতো দাবি মেনে নেয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপীয় দেশগুলো নিজেদের শান্তি প্রস্তাব পেশ করে। জেনেভায় আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন জানায়, তারা যুদ্ধ শেষ করতে ‘হালনাগাদ ও পরিমার্জিত শান্তি কাঠামো’ তৈরি করেছে। পুতিন পরবর্তীতে বলেন, চলমান আলোচনা কোনো চূড়ান্ত চুক্তি নয়, বরং ভবিষ্যতের চুক্তির ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে এমন প্রস্তাব।
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ট্রাম্প বারবার বলেছেন, তিনি ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে চান। গত আগস্টে আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক হলেও এখন পর্যন্ত মার্কিন প্রশাসন যুদ্ধ বন্ধে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি আনতে পারেনি।
ইউক্রেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নিকোলে আজারভ দাবি করেছেন, পশ্চিমা দেশ থেকে দেওয়া সহায়তার মধ্যে ১০ হাজার কোটি ডলারের বেশি অর্থ দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের পকেটে চলে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) মিলে ইউক্রেনকে মোট ৩৬ হাজার কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছে।
পূর্ব ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শহর পোকরোভস্ক সোমবার রাশিয়ার সেনাদের দখলে আসে। রুশ কমান্ডাররা পুতিনকে নিশ্চিত করার পর প্রেসিডেন্ট এই জয়কে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “এই সাফল্য যুদ্ধের বৃহত্তর লক্ষ্য পূরণে মস্কোকে সহায়তা করবে।” তবে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, পোকরোভস্ক দখলের লড়াই এখনও চলছে।
পুতিন সেনা শীর্ষ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, “আমি আপনাদের ধন্যবাদ দিতে চাই। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ পথ। বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর সময় প্রাথমিকভাবে আমরা যেসব কাজ নির্ধারণ করেছিলাম, পদক্ষেপগুলো যে সেদিকেই যাচ্ছে।” মস্কোর দাবী যদি সত্য প্রমাণিত হয়, তাহলে পোকরোভস্ক দখলের মাধ্যমে ইউক্রেনের দোনেৎস্কে থাকা ক্রামাতোরস্ক ও স্লোভিয়ানস্কের দিকে আরও এগোনো সম্ভব হবে। রাশিয়া মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনবাস অঞ্চল দখল করতে চায়, যা দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক প্রদেশ নিয়ে গঠিত। লুহানস্কের প্রায় পুরো অংশ এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, আর পোকরোভস্ক দোনেৎস্ক প্রদেশে অবস্থিত।