
কুষ্টিয়ায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ছয়জনকে হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আজ জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন তাদের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করতে যাচ্ছে। একই দিনে প্রথম সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণেরও প্রস্তুতি নিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
রোববার ৩০ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলের সামনে প্রসিকিউশনের বক্তব্যের পর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হওয়ার কথা। প্যানেলের অন্য সদস্যরা হলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
এরই মধ্যে অভিযোগ গঠনবিরোধী রিভিউ আবেদন করেছেন ইনু, যেখানে তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে “সো-কলড” হিসেবে উল্লেখ করেন। প্রসিকিউশন এই মন্তব্যকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার পর্যায়ে পড়ে বলে আখ্যায়িত করেছে এবং আবেদনটি খারিজের অনুরোধ জানিয়েছে। এ বিষয়ে আজ আদেশ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ট্রাইব্যুনাল-২ গত ২ নভেম্বর ইনুর বিরুদ্ধে আনা আটটি অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয় এবং আজকের দিনটি সূচনা বক্তব্য ও সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য নির্ধারণ করে। অভিযোগগুলো ইনুর সামনে পড়ে শোনানোর পর তিনি নিজেকে সম্পূর্ণ নির্দোষ বলে দাবি করেন। ২৮ অক্টোবর ইনুর পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী শুনানিতে বলেন, তার মক্কেলের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই সত্য নয় এবং তিনি অব্যাহতি প্রাপ্য। তবে প্রসিকিউশন জানায়, ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম নেতা হিসেবে ইনু দায় এড়াতে পারেন না। এর আগে ২৩ অক্টোবর প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।
চলতি বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনাল ইনুকে হাজির করার নির্দেশ দেয়। এর আগে ২৫ সেপ্টেম্বর প্রসিকিউশন জুলাই-আগস্টের গণহত্যায় সহযোগিতাসহ নির্দিষ্ট আটটি অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়। শুনানির পর আদালত অভিযোগ গ্রহণ করে এবং প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি করে।
গত বছরের ২৬ আগস্ট রাজধানীর উত্তরা থেকে হাসানুল হক ইনুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি বর্তমানে একাধিক মামলায় কারাবন্দী। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ইনু তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটের মনোনীত প্রার্থী হয়েও কুষ্টিয়ার নিজের আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন।
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় কুষ্টিয়া শহরে শ্রমিক আশরাফুল ইসলাম, সুরুজ আলী বাবু, শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মুস্তাকিন, উসামা, ব্যবসায়ী বাবলু ফরাজী এবং চাকরিজীবী ইউসুফ শেখ নিহত হন। আহত হন আরও অনেকে। এই হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতেই ইনুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের হয়। তদন্ত শেষে সংস্থার কর্মকর্তারা প্রতিবেদন দাখিল করেন এবং যাচাই-বাছাই করে প্রসিকিউশন উসকানি ও ষড়যন্ত্রসহ আটটি অভিযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করে। তার বিরুদ্ধে দাখিল করা ফরমাল চার্জ ৩৯ পৃষ্ঠার। এই মামলায় ২০ জনকে সাক্ষী রাখা হয়েছে, পাশাপাশি তিনটি অডিও ও ছয়টি ভিডিও যুক্ত করেছে প্রসিকিউশন।