
রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি প্রধান ব্যাংকে (সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী) হাজার হাজার কর্মকর্তাকে পদ ছাড়াই পদোন্নতি দেওয়ার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে সরকার। ব্যাংকগুলোর জনবল কাঠামো ভেঙে সুপার নিউমারারি ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে নজিরবিহীন এ পদোন্নতি, যার সংখ্যা ৭ হাজার ২১৫। বিষয়টি সামনে আসার পর, প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত জানুয়ারিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক চারটিতে মোট ১০ হাজারেরও বেশি কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক, অর্থাৎ ৭ হাজার ২১৫ জনের পদোন্নতি হয় পদ না থাকা সত্ত্বেও, যা ব্যাংকিং খাতে গুরুতর অনিয়ম হিসেবে ধরা হচ্ছে।
এমন অস্বাভাবিক ও বিধি বহির্ভূত পদোন্নতির বিষয়টি আলোচনায় এলে সরকারের উচ্চপর্যায়ে তৎপরতা শুরু হয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পক্ষ থেকে গত ৭ জুলাই নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়,
(ক) “রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসমূহে বিধি বহির্ভূত পদোন্নতির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিধি অনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে।”
(খ) “বাস্তবসম্মত ও সুষম জনবল কাঠামো প্রণয়ন এবং কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে একটি সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত করে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রতিবেদন দিতে হবে।”
(গ) “চাকরির প্রবিধানমালা সংশোধন করে তা সরকারি নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে এবং পদ সৃষ্টি হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করতে হবে।”
(ঘ) “স্বাধীন একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করে প্রমোশন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে পূর্ববর্তী বিতর্কিত প্রমোশনগুলো পর্যালোচনা ও যাচাই করবে কমিটি।”
নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে ৫৩.০০.০০০০.৩১২.৯৯.০০৮.২০-২৪০ নম্বর স্মারকে।
এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকাওয়াচ-কে অনানুষ্ঠানিকভাবে বলেন, “গায়ের জোরে অনেকে বোর্ডরুমে ঢুকে আমাদের নিয়মিতভাবে সুপার নিউমারি দিতে বাধ্য করেছে।”
এই পদোন্নতির পেছনে কারা ছিলেন, তা খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়ায় এখন চাপের মুখে পড়তে যাচ্ছেন ব্যাংকগুলোর সাবেক পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কিছু কর্মকর্তা। কারণ, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক হওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠানে পদোন্নতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা থাকে।
তবে এ বিষয়ে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী চারটি ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁদের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।