
বাংলাদেশ ব্যাংক একটি খসড়া প্রবিধান প্রকাশ করেছে, যা দেশের বাইরে ও ভেতরে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানগুলোকেও ই-মানি ইস্যু করার সুযোগ দেবে। এই খসড়া ‘রেগুলেশনস ফর ই-মানি ইস্যুয়ারস ইন বাংলাদেশ’ নামের নথিটি জনসাধারণের মতামতের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে রাখা হয়েছে। নতুন বিধিমালার মাধ্যমে দেশে দীর্ঘদিন ধরে প্রযোজ্য ব্যাংক-নির্ভর ডিজিটাল আর্থিক সেবা মডেল থেকে ধীরে ধীরে সরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনের পর ব্যাংক এবং স্বাধীন ডিজিটাল ফিন্যান্স প্রতিষ্ঠান উভয়ই ই-মানি ইস্যু করতে পারবে।
বর্তমান এমএফএস ও পিএসপি অপারেটরদের ক্ষেত্রে, তারা ব্যাংক-নির্ভর হোক বা না হোক, এই প্রবিধান কার্যকর হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে নতুন কাঠামোর সাথে খাপ খাইয়ে নতুন লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে বিকাশ, রকেট, নগদসহ টালি-পে, পাঠাও-পে ও সেবা পে-র মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ই-মানি ইস্যু করে থাকে এবং ডিজিটাল লেনদেন ও পেমেন্ট সেবা প্রদান করে।
বাংলাদেশ ব্যাংক এই খসড়া প্রবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে ই-মানি ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির আওতায় আনতে চাচ্ছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা, আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং গ্রাহকের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
প্রস্তাবিত নতুন নিয়মের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতের বাইরে থাকা প্রতিষ্ঠানকেও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি, ই-মানির নিরাপত্তা ও নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করা এবং উদ্ভাবনভিত্তিক প্রতিযোগিতামূলক পেমেন্ট পরিবেশ তৈরির সুযোগ দেওয়া হবে।
খসড়া অনুযায়ী, দুই ধরনের ই-মানি ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠান থাকতে পারবে। এক, অনুমোদিত ইএমআই (এমআই), যেখানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থাকবে। দুই, ডেডিকেটেড ইএমআই (ডিইএমআই), যারা ব্যাংকের বাইরে থেকে শুধুমাত্র ই-মানি এবং সম্পর্কিত পেমেন্ট কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
ডিইএমআইদের জন্য ন্যূনতম ৫০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন থাকতে হবে। এছাড়া, তাদের তিন বছরের ব্যবসায়িক ও ঝুঁকি পরিকল্পনা জমা দিতে হবে, যথাযথ সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে এবং গ্রাহকের তহবিল রক্ষার জন্য ট্রাস্ট ও সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্ট স্থাপন করতে হবে।
ই-মানি ইস্যুকারীরা শক্তিশালী ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কাঠামো বাস্তবায়ন, নির্ভরযোগ্য অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও পরীক্ষিত প্রযুক্তি বজায় রাখতে হবে। এছাড়া, উচ্চমূল্যের লেনদেনে মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন ব্যবহার করতে হবে এবং ক্রমাগত পরিবর্তনশীল হুমকির বিরুদ্ধে জালিয়াতি শনাক্তকরণ ও সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির জন্য বোর্ড অডিট ও ঝুঁকি কমিটি গঠন করা বাধ্যতামূলক হবে। নিয়ম লঙ্ঘন করলে ন্যূনতম ৫০ লাখ টাকা জরিমানা, লাইসেন্স বাতিল বা দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা হতে পারে।
চূড়ান্ত প্রবিধান জারির আগে অংশীদারদের মতামত জানাতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রবিধান কার্যকর হলে নতুন কাঠামো বাংলাদেশের ডিজিটাল ফিন্যান্স খাতকে পুনর্গঠন করবে এবং চীন, ভারত ও মালয়েশিয়ার মতো আন্তর্জাতিক চর্চার সঙ্গে আরও সামঞ্জস্যপূর্ণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।