
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা তিন দফা দাবির বাস্তবায়নের আশায় গত বৃহস্পতিবার থেকে পুনরায় লাগাতার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি শুরু করেছেন। প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের বুধবার রাতের এক বিজ্ঞপ্তিতে সারাদেশে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বার্ষিক পরীক্ষার ঠিক আগে এই কর্মবিরতির ঘোষণায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
শিক্ষকদের তিন দফা দাবির মধ্যে রয়েছে: সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল দশম গ্রেডে উন্নীত করা, চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেডের জটিলতা নিরসন, এবং সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি নিশ্চিত করা।
পরিষদের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আশ্বাস সত্ত্বেও দাবির বাস্তবায়নে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যায়নি। তাই ২৭ নভেম্বর থেকে কর্মবিরতি শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ৮ নভেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও শাহবাগে পুলিশের হামলায় শতাধিক শিক্ষক আহত হওয়ার পর সরকার তাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু আশ্বাসের ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও ১১তম গ্রেডের প্রজ্ঞাপনসহ তিন দফা দাবিতে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় শিক্ষকরা ক্ষুব্ধ।
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক খায়রুন নাহার লিপি বলেন, “দীর্ঘদিন আলোচনার পরেও আশ্বাস ছাড়া কোনো বাস্তব অগ্রগতি নেই। তাই বাধ্য হয়ে আমরা পূর্ণদিবস কর্মবিরতিতে গেছি।”
পরিষদের আরেক আহ্বায়ক শামছুদ্দিন মাসুদ জানান, “আমরা চাই, সরকারের দেওয়া ১১তম গ্রেডের প্রতিশ্রুতি দ্রুত প্রজ্ঞাপন আকারে জারি হোক। তিন দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।”
গতকাল সন্ধ্যায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান আন্দোলনরত শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সভা সূত্রে জানা যায়, মহাপরিচালক কর্মবিরতি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে শিক্ষক নেতারা দাবি পূরণের কোনো লিখিত নিশ্চয়তা ছাড়াই কর্মসূচি প্রত্যাহারে রাজি হননি।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫,৫৬৭ এবং সহকারী শিক্ষকের সংখ্যা তিন লাখ ৮৪ হাজার। সম্প্রতি প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১১তম থেকে দশম গ্রেডে উন্নীত করা হলেও সহকারী শিক্ষকরা এখনও ১৩তম গ্রেডে রয়েছেন।
এদিকে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নবম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, দ্রুত স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গঠনসহ চার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার তারা ‘সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি’ ব্যানারে রাজধানীর আব্দুল গণি রোডের শিক্ষা ভবন চত্বরে অবস্থান নিয়েছেন। আগামী রোববারের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে সোমবার থেকে বার্ষিক পরীক্ষা ও ভর্তি কার্যক্রম বর্জন করে সাত শতাধিক সরকারি স্কুলে ‘শাটডাউন’ ঘোষণা করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহাব উদ্দিন মাহমুদ সালমী বলেন, “সহকারী শিক্ষক পদটি নবম গ্রেডে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করা এবং দ্রুত মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গঠন করলে শিক্ষকরা অন্যান্য প্রশাসনিক পদে পদোন্নতির সুযোগ পাবেন।”
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৭২১।