
পৃথিবীতে অন্যায় ও পাপাচার যখন সীমা ছাড়িয়ে যায়, তখন মানুষের সামনে সতর্কবার্তা হিসেবে নেমে আসে ভয়াবহ বিপর্যয়; এমন ইঙ্গিতই পাওয়া যায় কোরআন ও হাদিসের ভাষ্যে। এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এ উম্মত ভূমিকম্প, বিকৃতি এবং পাথরবর্ষণের মুখোমুখি হবে। একজন সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কখন সেটা হবে হে আল্লাহ রাসুল?’ তিনি (সা.) বলেন, যখন গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্র বিস্তৃতি লাভ করবে এবং মদ্যপানের সয়লাব শুরু হবে। (তিরমিজি: ২২১২)
ইতিহাসে দেখা যায়, আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন যুগে নানা জাতিকে সতর্ক করেছেন, পরীক্ষা করেছেন। যারা আল্লাহর নির্দেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তাদের উপর নেমে এসেছে কঠিন শাস্তি। কোরআনে উল্লেখ আছে, ভয়াবহ ভূমিকম্পে ধ্বংস হওয়া একটি জাতি হলো হজরত লূত (আ.)-এর সম্প্রদায়। সমকামিতার মতো বিকৃত আচরণে লিপ্ত হয়ে তারা এমন এক পাপাচারের সূচনা করেছিল, যা এর আগে কোনো জাতির মধ্যেই দেখা যায়নি।
আল্লাহ তাঁদের দিয়েছিলেন উর্বর ভূমি ও অপরিমিত সম্পদ। সেই প্রাচুর্যই তাদের আরও উদ্ধত করে তোলে। তারা আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করত এবং লূত (আ.)-কে নানা উপায়ে কষ্ট দিত। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে যে লূত (আ.) তাদের বলেছিলেন, “তোমরা চরম অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতার কাজ করছো যা তোমাদের পূর্বে সারা বিশ্বে কেউ কখনো করেনি। তোমরা কামপ্রবৃত্তি পূরণ করার জন্য মেয়েদের কাছে না গিয়ে পুরুষদের কাছে যাচ্ছো। প্রকৃতপক্ষে তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী জাতি।” (সুরা আ’রাফ: ৮০-৮১)
লূত (আ.) নিরন্তর উপদেশ দিলেও তারা সেসব উপেক্ষা করে নবীর বিরোধিতা অব্যাহত রাখে। এমনকি লূত (আ.)-এর স্ত্রীও এই পাপাচারী সম্প্রদায়ের সহযোগী ছিলেন। শেষ পর্যন্ত আল্লাহর পক্ষ থেকে ভোরের আলো ফুটতেই তাদের ওপর নেমে আসে ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প; পুরো নগরী উল্টে গিয়ে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়।
তাফসিরে বলা হয়েছে, জিব্রাইল (আ.), ইস্রাফিল (আ.) এবং মিকাইল (আ.) সুদর্শন পুরুষের রূপে লূত (আ.)-এর এলাকায় আগমন করেন। লূত (আ.) গোপনে তাদের আশ্রয় দেন, কিন্তু তাঁর স্ত্রী খবরটি পাপাচারী লোকদের কাছে ফাঁস করে দেন। বিকৃত আকাঙ্ক্ষায় উন্মত্ত জনতা লূত (আ.)-এর বাড়ি আক্রমণ করলে তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। তখন ফেরেশতারা তাকে আশ্বস্ত করে বলেন, “হে লূত (আ.)! আমরা তোমার পালনকর্তার পক্ষ হতে প্রেরিত ফেরেশতা। এরা কখনো তোমার দিকে পৌঁছাতে পারবে না... ভোর বেলাই তাদের প্রতিশ্রুতির সময়, ভোর কি খুব নিকটে নয়?” (সুরা হুদ: ১১)
এরপর জিব্রাইল (আ.)-এর এক আঘাতে সব পাপাচারী অন্ধ হয়ে যায়। লূত (আ.) নিরাপদে সরে যাওয়ার পর তিনি সমগ্র সাদ্দূম নগরীকে ডানা দিয়ে তুলে নিয়ে এত উচ্চতায় নেন যে প্রথম আসমানের ফেরেশতারাও তাদের কুকুর ও মোরগের ডাক শুনতে পান। ঘুমন্ত মানুষের ওপর তাদের ঘরবাড়ি আছড়ে পড়ে এবং আকাশ থেকে শুরু হয় পাথরবর্ষণ।
এভাবে পুরো জনপদ উল্টে গিয়ে ভূমিতে ধসে পড়ে। প্রতিটি পাপীর নাম লেখা পাথর বর্ষিত হয়, এমনকি যারা নগরীর বাইরে ছিল তারাও রেহাই পায়নি। পরে সেখানে দূষিত পানির স্রোত প্রবাহিত করা হয়। কোরআনে বলা হয়েছে, “অবশেষে আমার আদেশ চলে আসল, তখন আমি উক্ত জনপদকে ধ্বংস করে দিলাম এবং তাদের উপর স্তরে স্তরে পাথর বর্ষণ করলাম।” (সুরা হুদ: ৮২)
এই মহাপ্রলয় থেকে কেউই বাঁচতে পারেনি। উল্লেখযোগ্যভাবে কওমে লূতের পাশাপাশি সামুদ জাতিও একইভাবে ভূমিকম্পের মাধ্যমে ধ্বংস হয়েছিল বলে কোরআনে উল্লেখ আছে।