
দীর্ঘ ১৭ বছরের বিরতি শেষে দেশে ফিরে আসলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। প্রথমে সিলেটে অবতরণ করার পর, বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি। তাকে বহনকারী বিমানটি অবতরণের পর দলের শীর্ষ নেতারা বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান।
বিমানবন্দর থেকে বিশেষ বাসে করে তিনি রাজধানীর ৩০০ ফিটের (জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়ে) গণসংবর্ধনা মঞ্চে পৌঁছান, যেখানে নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে দেশবাসীর উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন।
বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, “এখান থেকে আমি আমার মা, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার কাছে যাব। এই মানুষটি এই দেশের মাটি ও মানুষকে নিজের জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবেসেছেন। আপনারা আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন যেন তিনি সুস্থ হতে পারেন।” তিনি আরও যোগ করেন, “সন্তান হিসেবে আমার মন আমার মায়ের বিছানার পাশে পড়ে আছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ত্যাগ ও উৎসর্গ কোনোভাবেই আমি ভোলা পারব না।”
তারেক রহমান বলেন, “আমরা দেখেছি আমাদের তরুণরা ২০২৪ সালের আগস্টে দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় কীভাবে আন্দোলন করেছে। ১৯৭১-এ যারা শহীদ হয়েছেন, ২০২৪-এর আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের রক্তের ঋণ শোধ করতে হলে প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।”
তিনি বলেন, “আজকের মানুষ কথা বলার অধিকার ফিরে পেতে চায়। তারা গণতন্ত্রের অধিকার ফিরে পেতে চায়। এখন সময় এসেছে সবাই মিলে দেশ গড়ার। এই দেশে পাহাড়ি ও সমতলের মানুষ, মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান—সবাই বসবাস করে। আমরা এমন একটি নিরাপদ বাংলাদেশ চাই, যেখানে নারী, পুরুষ বা শিশু যেই হোক না কেন ঘর থেকে বের হয়ে নিরাপদে ফিরে আসতে পারবে।”
ভবিষ্যতের জন্য তরুণ প্রজন্মকে দেশের উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে উল্লেখ করে তিনি গণতান্ত্রিক ও শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দেশ গড়ার গুরুত্বে জোর দেন। বক্তৃতায় তিনি তিনবার উচ্চারণ করেন, “আমরা দেশের শান্তি চাই।”
প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। রাজধানীর ৩০০ ফিট এলাকায় ভোর থেকেই লাখ লাখ নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ দলীয় পতাকা ও ব্যানার হাতে উপস্থিত ছিলেন। গণসংবর্ধনাস্থলে নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও যুবকরা তারেক রহমানকে স্বাগত জানান।
বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে খালি পায়ে দেশের মাটি স্পর্শ করে তিনি এক মুঠো মাটি হাতে নেন। লাল-সবুজ রঙের বিশেষ বাসে চড়ে তিনি গণসংবর্ধনা মঞ্চের উদ্দেশে রওনা হন। পথে তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান এবং জনতাও তাকে অভিবাদন জানায়।
এদিনের সংবর্ধনা শেষে তারেক রহমান এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে মা, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে যাবেন। তার স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমান ইতোমধ্যেই গুলশানের বাসভবনে পৌঁছেছেন।
উল্লেখ্য, বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত সোয়া ১২টায় লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ঢাকা আসার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন তারেক রহমান। একই দিন রাত সোয়া ৮টায় লন্ডনের নিজ বাসা ত্যাগ করেন, এবং রাত সোয়া ১০টায় হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছান।