
রাজধানীর ৩০০ ফিট এলাকায় আয়োজিত বিশাল গণসংবর্ধনায় বক্তব্য দিতে গিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিশ্বখ্যাত কৃষ্ণাঙ্গ অধিকার আন্দোলনের নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের ঐতিহাসিক উক্তি ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’-এর প্রসঙ্গ টানেন। তার বক্তব্যের পর থেকেই সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে- কে ছিলেন এই মার্টিন লুথার কিং?
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দীর্ঘ ১৭ বছর পর নিজ দেশের মাটিতে পা রাখার পর জনতার মুখোমুখি দেওয়া বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, মার্টিন লুথার কিংয়ের যেমন একটি স্বপ্ন ছিল, তেমনি বাংলাদেশের মানুষের জন্যও তার একটি পরিকল্পনা রয়েছে।
মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র ছিলেন শান্তি ও নাগরিক অধিকার আন্দোলনের এক কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব। তিনি একজন আমেরিকান ব্যাপটিস্ট ধর্মযাজক এবং যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার আন্দোলনের প্রধান নেতা হিসেবে পরিচিত। ১৯২৯ সালের ১৫ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় এক পাদরি পরিবারে তার জন্ম। বর্ণবৈষম্য যখন যুক্তরাষ্ট্রে চরম আকার ধারণ করেছিল এবং কৃষ্ণাঙ্গরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছিল, তখন নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠেন মার্টিন লুথার কিং।
১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত এক ঐতিহাসিক সমাবেশে তিনি তার বিখ্যাত ভাষণ দেন, যার মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’।

সেই ভাষণে তিনি বলেছিলেন, “আমার একটি স্বপ্ন আছে যে, একদিন এই জাতি জেগে উঠবে এবং মানুষের সমঅধিকার নিশ্চিত করবে। আমার স্বপ্ন আছে যে, আমার চার সন্তান একদিন এমন এক দেশে বাস করবে যেখানে তাদের গায়ের রঙ দিয়ে নয়, বরং তাদের চরিত্রের গুণাবলি দিয়ে বিচার করা হবে।”
এই ভাষণ বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের চেতনাকে গভীরভাবে আলোড়িত করে। অহিংস আন্দোলনে বিশ্বাসী মার্টিন লুথার কিং মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন। সহিংসতার পথ পরিহার করে তিনি কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটাধিকার ও সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যান। তার এই অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৬৪ সালে মাত্র ৩৫ বছর বয়সে তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন, যা তাকে সে সময়ের সর্বকনিষ্ঠ নোবেলজয়ীতে পরিণত করে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল মেমফিস শহরের একটি হোটেলের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় আততায়ীর গুলিতে প্রাণ হারান এই মানবাধিকার নেতা।

এদিকে, গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মার্টিন লুথার কিংয়ের ‘আই হ্যাভ অ্যা ড্রিম’ উক্তির প্রসঙ্গ টেনে তারেক রহমান বলেন, ‘ভাই-বোনেরা, মার্টিন লুথার কিংয়ের নাম শুনেছেন না আপনারা? নাম শুনেছেন তো? মার্টিন লুথার কিং-এর একটি বিখ্যাত ডায়লগ আছে— ‘আই হ্যাভ অ্যা ড্রিম’। আজ এই বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে আপনাদের সবার সামনে আমি বলতে চাই, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের একজন সদস্য হিসেবে আপনাদের সামনে আমি বলতে চাই— ‘আই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান’ ফর দ্য পিপল অব মাই কান্ট্রি, ফর মাই কান্ট্রি (দেশের মানুষের জন্য, দেশের জন্য আমার একটি পরিকল্পনা আছে)। আজ এই পরিকল্পনা দেশের মানুষের স্বার্থে, দেশের উন্নয়নের জন্য, দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদি সেই প্ল্যান, সেই কার্যক্রম, সেই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করতে হয়– প্রিয় ভাই-বোনেরা, এই জনসমুদ্রে যত মানুষ উপস্থিত আছেন এবং সারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পক্ষে যত মানুষ আছেন, প্রত্যেকটি মানুষের সহযোগিতা আমার লাগবে। প্রত্যেকটি মানুষের সহযোগিতা আমাদের লাগবে। আপনারা যদি আমাদের পাশে থাকেন, আপনারা যদি আমাদেরকে সহযোগিতা করেন, ইনশাআল্লাহ আমরা ‘আই হ্যাভ এ প্ল্যান’ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হব।’