
আফ্রিকা থেকে আসা অভিবাসী ও শরণার্থীদের বহনকারী একটি নৌকা ইয়েমেন উপকূলে ডুবে যাওয়ায় অন্তত ৬৮ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো নিখোঁজ রয়েছেন আরও ৭০ জনের বেশি।
আল জাজিরার সোমবার (৪ আগস্ট) প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এই ঘটনার তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আইওএম-এর ইয়েমেন কার্যালয়ের প্রধান আবদুসাত্তার এসোয়েভ অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) জানান, নৌকাটিতে মোট ১৫৪ জন ইথিওপিয়ান ছিলেন। ইয়েমেনের আবিয়ান প্রদেশের উপকূলে এ নৌযানটি দুর্ঘটনায় পড়ে। তিনি বলেন, “দুর্ঘটনায় ১২ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। খানফার জেলায় ৫৪ জনের মরদেহ ভেসে আসে এবং আরও ১৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।”
এর আগে ইয়েমেনের স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, অন্তত ৫৪ জন মারা গেছেন।
জাঞ্জিবার শহরের স্বাস্থ্য কার্যালয়ের পরিচালক আবদুল কাদের বাজামিল বলেন, “নিহতদের দাফনের জন্য শাকরা এলাকার কাছে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”
আফ্রিকার হর্ন অঞ্চল থেকে ইয়েমেনের দিকে যাত্রা করা সমুদ্রপথটি দীর্ঘদিন ধরেই শরণার্থী ও অভিবাসীদের জন্য ব্যবহৃত হলেও এটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত। বিশেষ করে ২০১৪ সালে ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে।
যদিও ২০২২ সালের এপ্রিলে হুথি বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধবিরতির পর দেশটিতে সহিংসতা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে এবং মানবিক সংকটেও কিছুটা স্বস্তি এসেছে।
তবে সোমালিয়া ও ইথিওপিয়ার মতো সংঘাত-বিধ্বস্ত দেশগুলোর মানুষজন এখনও ইয়েমেন হয়ে উপসাগরীয় ধনী দেশগুলোর উদ্দেশে ঝুঁকিপূর্ণ পথ পাড়ি দিচ্ছেন। আইওএম এই রুটকে বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত ও বিপজ্জনক অভিবাসন পথ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
এই পথে চলাচলকারী অনেক অভিবাসী অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই নৌকায় রওনা দেন, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তোলে।
আইওএম-এর তথ্যমতে, ২০২৪ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৬০ হাজারেরও বেশি অভিবাসী ও শরণার্থী ইয়েমেনে পৌঁছেছেন, যা গত বছরের ৯৭ হাজার ২০০ জনের তুলনায় অনেক কম। সংস্থাটি তাদের মে মাসের প্রতিবেদনে জানায়, সমুদ্রপথে নজরদারি বৃদ্ধির কারণে অভিবাসনের হার কমে এসেছে।
গত দুই বছরে এই রুটে শত শত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আইওএম জানিয়েছে, ২০২৩ সালে এই পথে ৫৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত এক দশকে নিখোঁজ হয়েছেন অন্তত ২,০৮২ জন, যাদের মধ্যে ৬৯৩ জনের মৃত্যুর তথ্য রয়েছে।