
বাংলাদেশ সচিবালয়ের ক্যাডার বহির্ভূত গেজেটেড ও নন-গেজেটেড কর্মকর্তাদের পদনাম পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা সরকার স্পষ্ট করেছে। রোববার (১০ আগস্ট) সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ বিষয়ে ন’টি গুরুত্বপূর্ণ দিক আলোচনা করা হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (বিধি) শামীম সোহেলের নেতৃত্বে আয়োজিত সভায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, অর্থ বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় মূলত নিম্নলিখিত বিষয়গুলো গুরুত্ব পেয়েছে—
প্রথমত, বাংলাদেশ সচিবালয়ের সাংগঠনিক কাঠামো মাঠ প্রশাসনের থেকে ভিন্ন হওয়ায় এখানে পৃথক এবং স্বতন্ত্র পদনামের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
দ্বিতীয়ত, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণাধীন ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’-এর কর্মীদের পদনাম বাণিজ্যিক ব্যাংক ও সুপ্রিম কোর্টের কর্মীদের পদনামের সঙ্গে পার্থক্য রয়েছে। সচিবালয়ের ক্ষেত্রেও মাঠ প্রশাসনের তুলনায় ভিন্ন পদনাম থাকা উচিত।
তৃতীয়ত, সহকারী সচিব পদটি দুই ধরনের (প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত) হওয়ায় যেহেতু বেতন গ্রেড-১০ এবং মর্যাদা অভিন্ন, তাই বাস্তবতার ভিত্তিতে এগুলো একত্রিত করার দাবি উঠেছে।
চতুর্থত, সচিবালয়ের বিভিন্ন শাখায় সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক, কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহকারী ও ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের পদনাম ও বেতন গ্রেড ভিন্ন হলেও দায়িত্ব ও কাজ একই। ফলে এ পদগুলোকে একক ও অভিন্ন পদবিতে রূপান্তর করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
পঞ্চমত, মাঠ প্রশাসনের বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের পদনাম পরিবর্তন করে মানসম্মত নামকরণ করা হয়েছে।
ষষ্ঠত, নিয়োগ বিধিমালা অনুসারে এক নিয়োগবিধিতে নিয়োগপ্রাপ্তদের আরেক নিয়োগবিধির আওতায় পদোন্নতির সুযোগ না থাকায় জটিলতা দেখা দেয়। তবে সচিবালয় নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৪ অনুযায়ী কম্পিউটার অপারেটর ও ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের পদ প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের ফিডার পদ হিসেবে গণ্য হবে।
সপ্তমত, ভিন্ন ভিন্ন পদনামের কারণে পদোন্নতির ক্ষেত্রে সম্মিলিত জ্যেষ্ঠতা তালিকা নিয়ে বিরোধ ও মামলা-মোকদ্দমা তৈরি হচ্ছে। এতে কর্মচারীদের মধ্যে দূরত্ব ও কলহ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা একক ও অভিন্ন পদনামে নামকরণের মাধ্যমে দূর করা যাবে।
অষ্টমত, সরকারি চাকরিতে উচ্চ বেতন গ্রেড থাকা সত্ত্বেও সম্মিলিত জ্যেষ্ঠতা তালিকা তৈরির ফলে সিনিয়ররা জুনিয়রদের দ্বারা পিছিয়ে পড়ছেন, যা পদোন্নতির ক্ষেত্রে জটিলতা ও বিরোধের জন্ম দিচ্ছে।
নবমত, কাজের প্রকৃতি ও পরিধি বিবেচনায় পদনাম পরিবর্তন করা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা বেতন গ্রেড অপরিবর্তিত রেখে করা হবে। এতে সরকারের অতিরিক্ত অর্থায়নের প্রয়োজন হবে না।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এই পদনাম সংশোধনের ফলে সচিবালয়ের কর্মীদের মধ্যে সমতা ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম আরও স্বচ্ছ ও ফলপ্রসূ হবে।