
শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আড়াইহাজার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বেড়ে গেছে ডাকাতির ঘটনা। মাত্র সাত দিনের ব্যবধানে পাঁচটি ডাকাতির ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে জনপদজুড়ে। বসতবাড়িতে ঢুকে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও মূল্যবান সামগ্রী লুটের পাশাপাশি বাধা দিতে গিয়ে মারধরের শিকার হচ্ছেন অনেকেই। নিরাপত্তাহীনতায় গ্রামবাসীরা পালা করে রাতভর পাহারায় নেমেছেন।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) সর্বশেষ রাত আড়াইটার দিকে উচিৎপুরা ইউনিয়নের ভৈরবদী এলাকায় রাজন রায়ের বাড়িতে হানা দেয় ২০-২৫ জনের একটি ডাকাত দল। তারা ভবনের কলাপসিবল গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে অস্ত্রের মুখে পরিবারের সদস্যদের জিম্মি করে বেঁধে রাখে। এরপর ৬০ হাজার টাকা, সাড়ে ছয় ভরি স্বর্ণালংকার, পাঁচ ভরি রুপা, মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য মালামাল লুট করে নেয়। পরে রাজন রায়ের ভাই দয়াল রায়ের ঘরের দরজা ভেঙে পরিবারের সদস্যদের জিম্মি করে এক ভরি স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়।
ডাকাত দল চলে যাওয়ার সময় পরিবারের লোকজন চিৎকার শুরু করলে দয়াল রায়, তাঁর ভাগনি রাজন রায়, ভাগনি জামাই সুজন রায় এবং প্রতিবেশী সিয়াম হোসেনকে কুপিয়ে জখম করা হয়। এরপর পাশের স্বর্ণকার নিতু রায়ের ঘরে ঢোকার চেষ্টা করলে মসজিদের মাইকে ডাকাতির ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে ডাকাতরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এর আগের দিন শনিবার রাত ১২টার দিকে গ্রামীণ টেক গার্মেন্টসের শ্রমিকদের কারখানার গাড়িতে খাগকান্দা ইউনিয়নের কদমতলী এলাকায় নামিয়ে দেওয়া হয়। পরে বাড়ি ফেরার পথে ‘মনির হোসেন মাদ্রাসা মোড়ে’ ১০-১২ জনের ডাকাত দলের মুখে পড়েন শ্রমিকরা। অস্ত্রের মুখে তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা লুট করা হয়।
শ্রমিক মাহমুদা আক্তার বলেন, “কারখানার গাড়ি থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করলে মুখোশ পরা ডাকাত দল আমাদের ঘিরে ধরে। বড় বড় দা উঁচিয়ে যা আছে সব দিতে বলে। প্রাণের ভয়ে মোবাইল ও টাকা দিয়ে দিই।”
এরও আগে ১৬ ডিসেম্বর রাত ২টার দিকে মাহমুদপুর ইউনিয়নের খিরদাসাদী এলাকায় ব্যবসায়ী আব্দুর রব মিয়ার বাড়িতে ১৫-২০ জনের ডাকাত দল হানা দেয়। আব্দুর রব জানান, ডাকাতরা কলাপসিবল গেট ভেঙে ঘরে ঢুকে পরিবারের সদস্যদের জিম্মি করে ১০ ভরি স্বর্ণালংকার, নগদ সাত লাখ ২০ হাজার টাকা ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী লুট করে। এ সময় তাঁকে এবং তাঁর টেক্সটাইল মিলের শ্রমিক আব্দুল মিয়াকে কুপিয়ে আহত করা হয়।
আহত শ্রমিক আব্দুল মিয়াকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ব্যবসায়ী আব্দুর রব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন। ডাকাতির সময় চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন থানায় খবর দিলে টহল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তখন ডাকাতরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং পরিস্থিতি একপর্যায়ে পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে পুলিশ গুলি ছুড়লেও কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
আড়াইহাজার থানার ওসি মোহাম্মদ আলাউদ্দিন জানান, সোমবার সুজন মিয়া নামে এক ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক ডাকাতির মামলা রয়েছে। ডাকাতদের ধরতে পুলিশি অভিযান চলছে এবং টহল জোরদার করা হয়েছে। তিনি বলেন, শীত বাড়ার সুযোগে ডাকাতরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতিটি এলাকায় স্থানীয়দের পাহারা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে, ইতোমধ্যে অনেক এলাকায় গ্রামবাসীরা পাহারা দিচ্ছেন।