
বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দলগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি জানতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনের শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে।
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর ভাটারা এলাকায় জামায়াত আমিরের বাসভবনে অনুষ্ঠিত হয় এই বৈঠক। আলোচনা শেষে সংবাদমাধ্যমের সামনে দলের পক্ষ থেকে ব্রিফিং করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
তিনি বলেন, “ইইউ প্রতিনিধিরা অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে মতবিনিময় করেছেন। তারা জানান, এবারের সফরের মূল উদ্দেশ্য হলো রাজনৈতিক দল ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করা। নির্বাচনকালীন সময়জুড়ে ৬৪টি জেলায় তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবেন এবং প্রতিটি জেলায় একজন করে প্রতিনিধি কাজ করবেন।”
ইইউ প্রতিনিধি দল নির্বাচন-পরবর্তী একটি বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন প্রকাশ করবে বলেও জামায়াত নেতাদের অবহিত করে। এসময় জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমের পাশাপাশি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে টেকনিক্যাল সহযোগিতা প্রয়োজন।
বৈঠকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিয়েও আলোচনা হয়। ইউরোপীয় প্রতিনিধি দল জানতে চায়, প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার বিষয়ে জামায়াতের অবস্থান কী। জবাবে ডা. শফিক বলেন, “জামায়াতই প্রথম এক কোটির বেশি প্রবাসী ভোটারের ভোটাধিকার নিয়ে দাবি তুলেছে।” তিনি জানান, এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে তাদের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে এবং কমিশন ও সরকার বিষয়টি ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে কার্যক্রম শুরু করেছে।
এছাড়াও, আলোচনায় উঠে আসে সম্ভাব্যভাবে জামায়াত যদি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে, তাহলে তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা কী হবে। জবাবে জামায়াত আমির তিনটি প্রধান বিষয় তুলে ধরেন।
প্রথমত, একটি নৈতিক, কারিগরি, দক্ষতা-ভিত্তিক ও মানবিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা বলেন, যা নাগরিকদের প্রকৃত অর্থে যোগ্য করে তুলবে।
দ্বিতীয়ত, সমাজ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। তার ভাষায়, “সমাজের সর্বস্তরে দুর্নীতি চেপে বসেছে। জামায়াতে ইসলামী দায়িত্ব পেলে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা হবে।”
তৃতীয়ত, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা নিয়ে কথা বলেন। এ বিষয়ে তিনি গত দেড় দশকে বিরোধী দল ও ভিন্নমতের প্রতি ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের’ নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “গত ১৫ বছরে আমাদের রাজনৈতিক অধিকার হরণ করা হয়েছে, আমাদের কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, আমার নিজেসহ অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
তিনি আরও স্মরণ করিয়ে দেন যে, ২০২৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষক দল যখন বাংলাদেশ সফরে এসেছিল, তখন তিনি ও দলের অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতা কারাগারে ছিলেন। সে সময় দলের পক্ষে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।
ডা. শফিকুর রহমান জানান, তাদের দল আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত। তবে শর্ত হিসেবে তিনি বলেন, “জুলাইয়ে প্রণীত জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে এবং তার আলোকে নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য।”
ব্রিফিংয়ে সেক্রেটারি জেনারেল আরও জানান, ইউরোপীয় প্রতিনিধি দল নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই আবারও বাংলাদেশ সফর করবে এবং সংশ্লিষ্ট মহলগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মতবিনিময় করবে।
এই বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ বিশেষজ্ঞ মেটে বাক্কেন, ম্যানুয়েল ওয়ালি এবং ইইউ ডেলিগেশন টু বাংলাদেশের ডেপুটি হেড বাইবা জারি না।
জামায়াতের পক্ষে বৈঠকে অংশ নেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মোবারক হোসাইন, ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াতের মেডিকেল থানার আমির ডা. এসএম খালিদুজ্জামান এবং আমিরের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মাহমুদুল হাসান।