
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেছেন, “বিগত সময়ে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নির্বাচন হয়েছে একটি ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠীকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য। আমরা মনে করছি আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে দ্বিতীয় ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠকে ক্ষমতায় বসাতে সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনুস পায়তারা শুরু করেছে। এই দেশটা কারো বাপ-দাদার নয়। তাই দেশ নিয়ে খেলা করবেন, মানুষ আপনাকে মেনে নেব, তা হবে না।”
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয় জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, পিআর পদ্ধতির প্রবর্তনসহ ৫ দফা দাবির পক্ষে।
অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন আরও বলেন, সরকার প্রধান লন্ডনে গিয়ে একটি দলের প্রধানের সঙ্গে দেখা করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন। “এটি তিনি করতে পারেন না। তিনি সকল দলের সাথে পরামর্শ করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেননি। এছাড়া জুলাই সনদ সকল দলের সামনে উপস্থাপন করা হলেও ঘোষণার পূর্বে দলগুলোর কাছে তা প্রকাশ করা হয়নি।”
তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে আমরা রাষ্ট্রের ৫টি যৌক্তিক সংস্কারের দাবি নিয়ে এসেছি। গত ৫৩ বছরে যে নির্বাচন হয়েছে, তার মাধ্যমে সংসদ কার্যকর হয়নি। ভোট ডাকাতি, চুরি, ছিনতাই, দিনের ভোট রাতে দেওয়া, এককভাবে নির্বাচন—এসব কৌশল শুধু আওয়ামী লীগই করেনি, বিএনপিও ১৯৯৬ সালে এককভাবে নির্বাচন করেছে। তিনি জানান, “আমরা এই নির্বাচনের খেলা খেলতে দেবো না।”
অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেন, “জামায়াতে ইসলামীর সাথে আমাদের বিরোধ থাকতে পারে। কিন্তু ফ্যাসিবাদমুক্ত, সুখী, সমৃদ্ধ ও কল্যাণ রাষ্ট্রের জন্য আমরা নির্বাচনী সমঝোতা করেছি। কিন্তু বিএনপি এই দুই দলের মধ্যে ফাটল ধরানোর জন্য ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তারা বলছে জামায়াত মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। আমি বলতে চাই যদি জামায়াতকে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য শাস্তি পেতে হয় তবে, বিএনপিকেও একই শাস্তি পেতে হবে। কারণ তারা রাজাকার আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে রাষ্ট্রপতি, শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী, আব্দুল আলিমকে মন্ত্রী করেছিল।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, “আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি বেশি চাঁদাবাজি করছে। আমাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা আগে আওয়ামী লীগকে ৫শ’ টাকা চাঁদা দিতেও এখন বিএনপিকে এক হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। আজকে তাদের চাঁদাবাজি, দখল, টেন্ডারবাজি, পাথরচুরিসহ নানা অপকর্মে দেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। দেশে ফ্যাসিস্টদের বারবার পতন হলেও ফ্যাসিবাদের পতন হয়নি। আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের পতন ও সুখী কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করবো।”
সমাবেশে ইসলামী আন্দোলন রংপুর মহানগরের সভাপতি হাফেজ মাওলানা আব্দুর রহমান কাসেমীর সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা ছিলেন মহানগর সেক্রেটারি আমিরুজ্জামান পিয়াল। বিশেষ অতিথি ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক ডা. আক্কাস আলী সরকার, জেলা সভাপতি এটিএম গোলাম মোস্তফা বাবু, মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির এটিএম আজম খানসহ অন্যান্য নেতারা।
সমাবেশ শেষে একটি গণমিছিল পাবলিক লাইব্রেরি মাঠ থেকে বের হয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিলের সময় পিআর পদ্ধতির প্রবর্তনসহ ৫ দফা দাবির পক্ষে দলটির নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন এবং প্লাকার্ড প্রদর্শন করেন।