
আগামী জাতীয় নির্বাচন ‘জুলাই সনদ’ অনুযায়ী আয়োজনসহ একাধিক রাজনৈতিক সংস্কার দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার থেকে রাজপথে নামছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ সাতটি ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল। তিন দিনের ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের সূচনা হবে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ ও জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায় বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই বিক্ষোভ কর্মসূচি চলবে। অংশগ্রহণকারী দলগুলো নিজ নিজ উদ্যোগে হলেও অভিন্ন দাবি ও সময়সূচি অনুসরণ করে আন্দোলন চালাবে বলে জানানো হয়েছে। রাজধানীতে কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে এরইমধ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সংগঠনগুলো।
জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের পাশাপাশি যেসব দল কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে, তারা হলো বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)।
তিন ধাপের এই আন্দোলনের প্রথম দিন আজ ঢাকায় বিক্ষোভ হবে। দ্বিতীয় দিনে, শুক্রবার, বিভাগীয় শহরগুলোতে এবং তৃতীয় দিনে, ২৬ সেপ্টেম্বর, দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় মিছিল করার পরিকল্পনা রয়েছে।
আন্দোলনের মূল দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে: ‘জুলাই সনদ’ অনুসারে নির্বাচন আয়োজন, প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি চালু, সব দলকে সমান সুযোগ প্রদান, সরকারের ‘ফ্যাসিস্ট আচরণ, দমন-পীড়ন, গণহত্যা ও দুর্নীতির’ বিচার নিশ্চিত করা এবং জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলকে ‘স্বৈরতন্ত্রের সহযোগী’ আখ্যা দিয়ে তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা।
জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়েছে। এতে নেতৃত্ব দেবেন দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
সমাবেশ শেষে মিছিলটি পুরানা পল্টন, জাতীয় প্রেসক্লাব, মৎস্য ভবন হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও আজ জোহরের নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করবে। মিছিলে নেতৃত্ব দেবেন দলের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম।
এই তিন দিনের কর্মসূচি গত সোমবার ঘোষণা করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, যা তাদের কথায় ‘গণদাবি আদায়ে যুগপৎ আন্দোলনের’ অংশ। তাদের ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী, ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায়, ১৯ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় শহরে এবং ২৬ সেপ্টেম্বর জেলা-উপজেলায় বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হবে।
ইতিমধ্যে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছে খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, জাগপা ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি। দলগুলো মঙ্গলবার পৃথক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নিজেদের কর্মসূচি আলাদাভাবে ঘোষণা করে।
আজকের বিক্ষোভের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস আসর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে মিছিল করবে। এতে নেতৃত্ব দেবেন দলটির আমির মাওলানা মামুনুল হক।
একইদিন বিকাল ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে খেলাফত মজলিস। মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন।
একই স্থানে বিকাল ৪টায় মিছিল করবে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন এবং একই সময়ে, একই স্থানেই কর্মসূচি পালন করবে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি। অন্যদিকে জাগপা বিকেল সাড়ে ৪টায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে।
সাতটি দল পৃথকভাবে মাঠে নামলেও, একক দাবির প্ল্যাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ এই আন্দোলনকে তারা যুগপৎ রাজনৈতিক চাপ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এখন দেখার বিষয়, এই কর্মসূচি কীভাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রভাব ফেলে।