
অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান দাবি করেছেন, সিলেটের পাথরমহাল এলাকাগুলোতে পাথর উত্তোলন নতুন নয়, বরং দীর্ঘদিন ধরেই এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে এই কাজ চালিয়ে আসছিলেন।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজনৈতিক সিরডাপ মিলনায়তনে “ঢাকার জলাধার পুনরুদ্ধার: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা” শীর্ষক নগর সংলাপে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, “সিলেটের ছয়টি জায়গা থেকে দীর্ঘদিন নির্বিঘ্নে পাথর উত্তোলন চলছিল। আমি প্রথম মামলা করেছি ২০০৯ সালে। এর আগেও অন্তত দুই বছর ধরে উত্তোলন চলছিল। ২০২০ সালে জাফলংয়ে পাথর উত্তোলন বন্ধ হলেও, লুটপাট আবার শুরু করার জন্য পাল্টা প্রচেষ্টা চলতে থাকে।”
তিনি আরও জানান, “কথা হচ্ছে কয়েক দিনে ৩০০ থেকে এক হাজার কোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে। অথচ ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে সরকার রাজস্ব পেয়েছে মাত্র ৪০ কোটি টাকা। লুটেরাদের আসলে আমরা নিজেরাই তৈরি করেছি।”
রিজওয়ানা হাসান দেশের পাথরের চাহিদা ও অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “দেশের মোট পাথরের চাহিদার মাত্র ৬ শতাংশ আসে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে, বাকিটা আমদানি করা হয়। তাহলে কেন এই ছয়টি জায়গা সংরক্ষণ করা গেল না?”
তিনি ভারতের উদাহরণ টেনে বলেন, “প্রতিবেশী দেশে গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ করে পর্যটন উন্নয়ন করা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে জাফলংসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো এখনো সংরক্ষিত হয়নি।"
সিলেটের পাথর উত্তোলন বন্ধ করতে রাজনৈতিক ঐক্যের গুরুত্বের কথাও তুলে ধরে রিজওয়ানা বলেন, “সর্বদলীয় ঐক্যের কথা আমি বলেছিলাম। রাজনৈতিক সমর্থন না থাকলে প্রশাসন সাহায্য করবে না। প্রশাসন সাহায্য না করলে পাথর তোলা বন্ধ করা সম্ভব নয়। জনগণ যখন এ ব্যাপারে কথা বলা শুরু করলো, তখনই আমরা সিলেটের পাথর উত্তোলন বন্ধ করতে সফল হয়েছি।”
তিনি আরও জানান, পাথর বিষয়টি তার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে না থাকলেও, সিলেটের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে গিয়েছেন এবং পদক্ষেপ নিতে উপদেষ্টাকে অনুরোধ করেছেন।
পরিবেশ উপদেষ্টা শেষকথায় বলেন, “যেভাবে আমরা সাদা পাথর নিয়ে কথা বলি, ঠিক তেমনই বাকখালি নদীর দূষণ নিয়েও কথা বলতে হবে। নদী দখলমুক্ত করতে রাজনৈতিক সমর্থন প্রয়োজন। তাই আমাদের রাজনৈতিক সমর্থন পেলে বাকখালী নদীকে সম্পূর্ণভাবে উদ্ধার করতে সক্ষম হব।”