
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি থেকে গৃহহীনদের “অবিলম্বে” সরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একইসঙ্গে শহরের অপরাধ দমনে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।
রোববার (১০ আগস্ট) নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশাল’-এ ট্রাম্প লিখেছেন, “আমরা আপনাদের (গৃহহীনদের) থাকার ব্যবস্থা করব, তবে রাজধানী থেকে অনেক দূরে। অপরাধীদের সরতে হবে না—তাদের আমরা জেলে পাঠাবো।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা আমাদের রাজধানী ফেরত চাই। এখানে (অপরাধীদের জন্য) কোনও ‘ভদ্রলোকি আচরণ’ হবে না।”
ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, সোমবার হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলন করে ওয়াশিংটন ডিসিকে “আগের যেকোনও সময়ের চেয়ে নিরাপদ ও সুন্দর” করার পরিকল্পনা তুলে ধরবেন। যদিও পরিকল্পনার বিস্তারিত এখনো প্রকাশ করেননি। এর আগে ২০২২ সালে তিনি শহরের বাইরে কম খরচের জমিতে ‘উচ্চমানের’ তাঁবুতে গৃহহীনদের রাখার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যেখানে শৌচাগার ও চিকিৎসা সেবার সুবিধা থাকবে।
সম্প্রতি এক নির্বাহী আদেশে তিনি গৃহহীনদের গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া সহজ করেন এবং গত সপ্তাহে ফেডারেল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রাজধানীর রাস্তায় মোতায়েনের নির্দেশ দেন। শুক্রবার ইউএস পার্ক পুলিশ, ডিইএ, এফবিআই ও ইউএস মার্শাল সার্ভিসসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের পাঠানো হয়। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানান, শনিবার রাতে প্রায় ৪৫০ জন ফেডারেল অফিসার মোতায়েন করা হয়।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯ বছর বয়সী এক সাবেক সরকারি কর্মচারীর ওপর কথিত গাড়ি ছিনতাই ও হামলার ঘটনার পরই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় রক্তাক্ত ভুক্তভোগীর ছবি শেয়ার করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এদিকে শহরের মেয়র মুরিয়েল বাউজার হোয়াইট হাউসের সমালোচনা করে বলেন, “২০২৩ সালে অপরাধের হার বেড়েছিল, কিন্তু এটা এখন ২০২৩ নয়। গত দুই বছরে আমরা সহিংস অপরাধকে ৩০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নিয়ে এসেছি।” তিনি ডেপুটি চিফ অব স্টাফ স্টিফেন মিলারের রাজধানীকে ‘বাগদাদের চেয়ে বেশি সহিংস’ আখ্যা দেওয়ার সমালোচনা করে মন্তব্য করেন, “যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের সঙ্গে তুলনা সম্পূর্ণ অতিরঞ্জিত ও ভুল।”
যদিও ওয়াশিংটন ডিসিতে মাথাপিছু হত্যার হার এখনও যুক্তরাষ্ট্রের অনেক শহরের তুলনায় বেশি। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৯৮টি হত্যাকাণ্ড রেকর্ড হয়েছে। তবে ফেডারেল তথ্য অনুযায়ী, গাড়ি ছিনতাই, হামলা ও ডাকাতির ঘটনাসহ মোট সহিংস অপরাধের সংখ্যা গত বছর ছিল গত তিন দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন।
ট্রাম্প সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে শহরে “অপরাধ, হত্যা ও মৃত্যু” বন্ধের পাশাপাশি এর “শারীরিক পুনর্নির্মাণ” বিষয়ক পরিকল্পনা তুলে ধরবেন বলে জানিয়েছেন। মেয়র বাউজারকে তিনি “ভালো মানুষ” আখ্যা দিয়ে বলেন, তার চেষ্টা সত্ত্বেও অপরাধ বেড়েছে এবং শহর “আরও নোংরা ও কম আকর্ষণীয়” হয়ে উঠেছে।
ওয়াশিংটন ডিসির জনসংখ্যা প্রায় ৭ লাখ, যার মধ্যে প্রায় ৩ হাজার ৭৮২ জন গৃহহীন। এর মধ্যে প্রায় ৮০০ জন সরাসরি রাস্তায় বসবাস করছে বলে জানিয়েছে অলাভজনক সংস্থা ‘কমিউনিটি পার্টনারশিপ’।