
একজন সাংবাদিককে প্রকাশ্যে ধরে নিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় উত্তাল কুষ্টিয়া। ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারসহ সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও মানবপ্রাচীর কর্মসূচি পালন করেছেন স্থানীয় সাংবাদিক ও সাধারণ নাগরিকরা।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত ঘণ্টাব্যাপী কর্মসূচিতে অংশ নেন জেলার বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধি ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কর্মীরা।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন দৈনিক দর্পণ পত্রিকার সম্পাদক ও সাংবাদিক নেতা মজিবুল শেখ। বক্তব্য রাখেন কালের কণ্ঠ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার তারিকুল হক তারিক, বাংলাভিশনের জেলা প্রতিনিধি হাসান আলী, দৈনিক কুষ্টিয়ার নির্বাহী সম্পাদক আলী মুজাহিদ এবং আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য সুলতান মারুফ তালহা।
পরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সাত দফা দাবিনামা পেশ করা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে ছিল: সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার, প্রেসক্লাবে কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল তা তদন্ত করা, এবং সদর থানার ওসির পক্ষপাতমূলক ভূমিকার বিচার।
উল্লেখ্য, ৬ অক্টোবর রাত ৮টার দিকে স্থানীয় সংবাদপত্র ‘কুষ্টিয়ার খবর’-এর সহ-সম্পাদক ও ডিজিটাল কনটেন্ট নির্মাতা রফিকুল্লাহ কালবি কুষ্টিয়া মডেল থানায় গিয়ে নিজের প্রাণনাশের শঙ্কা ও হুমকির বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করতে চেয়েছিলেন। তবে ওসি তাকে মামলা না নিয়ে ‘আপসে’ মীমাংসার পরামর্শ দিয়ে বিদায় দেন।
থানার বাইরে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিপক্ষরা তার পিছু নেয় এবং পরে সনো গলিতে তাকে ধরে ফেলে। এরপর ‘খবরওলা’ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুন্সি শাহীন আহম্মেদের নেতৃত্বে একটি দল তাকে জোরপূর্বক কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবে নিয়ে যায়।
সেখানে তার ওপর চালানো হয় বর্বর নির্যাতন। পেটের ওপর একাধিকবার লাথি মারা হলে তার খাদ্যনালী ছিঁড়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রেসক্লাবের বাইরে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা।
স্থানীয়রা প্রথমে তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরবর্তীতে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় রফিকুল্লাহ কালবির স্ত্রী বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় নাম উল্লেখ করে চারজনকে আসামি করা হয়। তারা হলেন: মুন্সী শাহীন আহম্মেদ জুয়েল, দৈনিক সত্যখবরের সাংবাদিক শরিফুল ইসলাম, সাংবাদিক আমিন হাসান এবং সামিউল আজিম ওরফে সনি আজিম। মামলায় অজ্ঞাত আরও ১০-১৫ জনকেও আসামি করা হয়েছে।
তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব থেকে অভিযুক্তদের সদস্যপদ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।