
খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় সংঘটিত সহিংসতা নিয়ে রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিবৃতি দিয়েছে। সেনাবাহিনীর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
আইএসপিআর জানায়, গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে মোটরসাইকেল চালক মামুন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলো দীঘিনালা ও রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। এতে তিনজন নিহতসহ অনেকেই আহত হন। এ বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর ওই ঘটনার এক বছর পূর্তির দিনে ইউপিডিএফ ও সহযোগী সংগঠনগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ মিছিল ও অনুরূপ সহিংসতা ঘটানোর চেষ্টা করে।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়ির সিঙ্গিনালা এলাকায় এক স্কুলছাত্রীর ধর্ষণের অভিযোগের পর ইউপিডিএফ মূল সংগঠনের সন্দেহভাজন সদস্য শয়ন শীলকে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ২৪ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে আইনি প্রক্রিয়া চলছে। শয়ন শীলের গ্রেপ্তারের পরও ইউপিডিএফের অঙ্গ সংগঠন পিসিপির নেতা উখ্যানু মারমা ‘জুম্ম ছাত্র-জনতার’ নামে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের ডাক দেয়। ২৫ সেপ্টেম্বর ইউপিডিএফের আহ্বানে খাগড়াছড়িতে অর্ধদিন হরতাল পালিত হয়। একই সময় দেশে-বিদেশের ব্লগার ও পার্বত্য এলাকার কিছু ব্যক্তির মাধ্যমে বাঙালিদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক অপপ্রচার চালানো হয়।
২৬ সেপ্টেম্বর ইউপিডিএফ কর্মী উখ্যানু মারমার নেতৃত্বে এবং সামাজিক মাধ্যমে উসকানিমূলক প্রচারণার কারণে খাগড়াছড়িতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অবরোধ চলাকালে ইউপিডিএফের প্ররোচনায় উশৃঙ্খলরা সেনা টহলদলের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে, এতে তিন সেনা সদস্য আহত হন। সেনাবাহিনী পরিস্থিতি মানবিক ও সংযমীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং বলপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকে।
২৭ সেপ্টেম্বর ইউপিডিএফ ও অঙ্গ সংগঠনগুলো আবারো দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টির চেষ্টা করে। বিভিন্ন স্থানে গুলি চালানো, ভাঙচুর, অ্যাম্বুলেন্সে হামলা এবং রাস্তা অবরোধ করে খাগড়াছড়ি পৌর এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মারাত্মকভাবে অবনত করে। জেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে। সেনাবাহিনী, বিজিবি ও অন্যান্য বাহিনী চরম ধৈর্য ও পরিশ্রমের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়।
খাগড়াছড়ি পৌরসভায় দাঙ্গা সৃষ্টির ব্যর্থতার পর ইউপিডিএফ ও অঙ্গ সংগঠনরা রোববার সকাল থেকে গুইমারা উপজেলার রামসু বাজারে ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাস্তা অবরোধ করে সাধারণ জনগণকে উসকে দেয়। সকাল সাড়ে ১০টায় ইউপিডিএফ কর্মী ও সন্ত্রাসীরা বাঙালি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গেলে সশস্ত্র, ইটপাটকেল ও লাঠি দিয়ে হামলা চালায়। এতে সেনাবাহিনীর তিন অফিসারসহ ১০ সদস্য আহত হন। রামগড় এলাকায় বিজিবির গাড়ি ভাঙচুর এবং সদস্যদের আঘাত করা হয়।
সংঘর্ষ চলাকালীন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ইউপিডিএফ সশস্ত্র সদস্যরা রামসু বাজারের পশ্চিমের উঁচু পাহাড় থেকে ১০০-১৫০ রাউন্ড গুলি ছুড়ে, এতে অনেক এলাকায় লোক গুলিবিদ্ধ হয়। সেনাবাহিনী দ্রুত সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ধাওয়া করলে তারা এলাকা ছাড়ে।
সেখানে ইউপিডিএফ এর বহিরাগত দুষ্কৃতিকারীরা অগ্নিসংযোগ করে এবং বাঙালিদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চালায়। রামসু বাজার ও গুইমারায় অতিরিক্ত সেনাদল মোতায়েনের পর বিকেল সাড়ে ৪টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
আইএসপিআর জানায়, ইউপিডিএফ ও অঙ্গ সংগঠনগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করার জন্য নারী ও স্কুলগামী শিশুদের বিভিন্ন মাধ্যমে নাশকতায় বাধ্য করছে। পাশাপাশি বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দেশীয় অস্ত্রসহ পার্বত্য এলাকায় আনার চেষ্টা চলছে। বিজিবি কাপ্তাই ব্যাটালিয়ন রোববার বিকেলে এক যাত্রীবাহী বাস থেকে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র জব্দ করে।
১৯ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বরের ঘটনার মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে পার্বত্য এলাকায় অস্থিতিশীলতা ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংগঠনের পেছনে একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্র রয়েছে। এর প্রমাণাদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে রয়েছে। সেনাবাহিনী পার্বত্যাঞ্চলের সব জাতিগোষ্ঠীর রাজনৈতিক নেতা ও জনগণকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়ে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছে। অপপ্রচার ও উসকানির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের অখণ্ডতা রক্ষায় সেনাবাহিনী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।