
গাজা উপত্যকায় চলমান মানবিক বিপর্যয় নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার। তিনি বলেছেন, সেখানে ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা "অবর্ণনীয়" এবং কোনো যুক্তিতেই এ পরিস্থিতিকে সমর্থন করা যায় না।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি শুক্রবার (২৫ জুলাই) এক প্রতিবেদনে জানায়, বৃহস্পতিবার দেওয়া এক বিবৃতিতে স্টারমার বলেন, গাজার মানবিক পরিস্থিতি আগে থেকেই সংকটজনক ছিল, তবে বর্তমানে তা আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। তিনি বলেন, "আমরা এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের সাক্ষী হচ্ছি।"
এই সংকট মোকাবিলায় জরুরি আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন তিনি। স্টারমার জানান, জার্মানি ও ফ্রান্সের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানো এবং প্রাণহানি ঠেকানোর উপায় খুঁজে বের করবেন।
গাজায় প্রতিদিনই খাদ্য সহায়তা নেওয়ার লাইনে দাঁড়িয়ে হতাহতের শিকার হচ্ছেন সাধারণ ফিলিস্তিনিরা। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের উদ্যোগে গঠিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) বিতরণ ব্যবস্থাও কার্যকরভাবে কাজ না করায় সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সতর্ক করেছে, গাজার অন্তত এক-চতুর্থাংশ মানুষ দুর্ভিক্ষসদৃশ অবস্থায় দিন পার করছেন।
মানবিক পরিস্থিতির অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে, গত সোমবার যুক্তরাজ্যসহ ২৮টি দেশ যৌথ বিবৃতি দিয়ে ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। তারা ত্রাণ সরবরাহে সব ধরনের বাধা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানায় এবং ইসরায়েলের ত্রাণ ব্যবস্থাপনাকে “বিপজ্জনক” আখ্যা দিয়ে বলে, এটি ফিলিস্তিনিদের মানবিক মর্যাদাকে খর্ব করছে।
এদিকে, ব্রিটেনের লেবার পার্টির বেশ কয়েকজন এমপি প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন যেন তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরও কড়া অবস্থান নেন এবং ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে জোর দেন।
তবে স্টারমার জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্য তখনই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে যখন মধ্যপ্রাচ্যে একটি টেকসই রাজনৈতিক সমাধান প্রতিষ্ঠিত হবে।
বৃহস্পতিবার রাতে আরেকটি বিবৃতিতে স্টারমার বলেন, “ইসরায়েলের উচিত এখনই পথ পরিবর্তন করা।” তিনি আবারও যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান এবং হামাসের হাতে থাকা সব বন্দিকে শর্তহীন মুক্তির দাবি করেন।
স্টারমার স্পষ্ট করে বলেন, “ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্রের অধিকার অপরিবর্তনযোগ্য ও মৌলিক।” তার মতে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে তা দুই-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পথে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।
একইদিন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ঘোষণা দেন, সেপ্টেম্বরেই ফ্রান্স ফিলিস্তিনকে একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে।
অন্যদিকে, গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে কাতারে চলমান আলোচনা থেকে নিজেদের প্রতিনিধি দল ফিরিয়ে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। কাতারের রাজধানী দোহায় গত দুই সপ্তাহ ধরে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে আলোচনা চললেও কোনো চূড়ান্ত সমাধান এখনো আসেনি।