
ইসরায়েলের গণহত্যার মুখোমুখি গাজার পরিস্থিতিতে ধর্মীয় নেতাদের কেবল প্রচারণায় সীমাবদ্ধ না থেকে ‘শান্তির জন্য কাজ করতে’ আহ্বান জানিয়েছে মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগ। এই আহ্বান জানানো হয় বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে, যা মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগ ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে আয়োজন করেন।
আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সংঘাত নিরসনে ধর্মীয় নেতাদের ভূমিকা’ শীর্ষক এই সম্মেলনে বিশ্বব্যাপী প্রধান ধর্মের প্রতিনিধিদের একত্রিত করা হয়। মুসলিম, খ্রিস্টান, হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা সহিংসতা ও সংঘাতের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে ধর্মীয় নেতাদের দায়িত্ব, ধর্মীয় কূটনীতি এবং গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা হামলার ওপর বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগের প্রতিনিধিত্বকারী আল-ইসা উদ্বোধনী বক্তৃতায় বলেন, “এই শীর্ষ সম্মেলন ধর্মীয় নেতাদের তাদের নিজ নিজ ধর্মের মূল্যবোধ সম্পর্কে একটি ঐতিহাসিক দায়িত্বের সামনে দাঁড় করাতে এসেছে। মূল্যবোধগুলো ঘোষিত হয়েছে এবং এগুলো বিশ্বব্যাপী শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখার জন্য সক্রিয়ভাবে প্রয়োগ করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আজ গাজা উপত্যকায় যা ঘটছে গণহত্যা এবং হৃদয়বিদারক দুর্ভিক্ষ, যা সমগ্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রত্যক্ষ করেছে তা মানবাধিকারের নীতির ক্ষেত্রে একটি বিপজ্জনক নজির। জাতিসংঘের সার্বজনীন সনদ জারির পর থেকে, আমাদের বিশ্ব কখনো এমন পরিস্থিতি দেখেনি। দুঃখজনক হলেও সত্য, এটি আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর প্রশ্ন তোলে।”
আরব নিউজ জানিয়েছে, আল-ইসা ধর্মীয় নেতাদের কেবল ‘প্রচার’-এর ওপর নয়, শান্তি স্থাপনে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া এবং অনুসারীদের মানবিক মর্যাদার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করা উচিত বলে আহ্বান জানান।
সম্মেলনে উপস্থিত মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীম বলেন, “প্রতিদিন শিশুরা মারা যাচ্ছে, ঘরবাড়ি ধ্বংস হচ্ছে, মানুষ বোমা হামলার শিকার হচ্ছে... এই পৃথিবীতে কী ঘটছে? আমাদের বিশ্বাস ও নৈতিক মূল্যবোধের পক্ষে দাঁড়ানো বিবেকের কণ্ঠস্বর কোথায়? আমাদের জেগে উঠতে হবে এবং ধর্মীয় নেতাদের তাদের মতামতে আরও দৃঢ় হতে হবে।”
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা যুদ্ধে কমপক্ষে ৬২,৮৯৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত, খাদ্য ও চিকিৎসার অভাবে মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী গাজার অধিকাংশ অবকাঠামো ধ্বংস করেছে এবং চিকিৎসা সহায়তা বন্ধ করেছে। ইচ্ছাকৃত অনাহারের কৌশলের কারণে অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে।
সম্মেলনে ৫৪টি দেশের ১৫০ জন বিদেশি ধর্মীয় প্রতিনিধি ও প্রায় ১,৫০০ জন অতিথি উপস্থিত ছিলেন।