
গাজায় যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাবের শর্ত মানতে হামাসকে ‘শেষ সতর্কবার্তা’ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর জবাবে হামাস জানিয়েছে, তারা দ্রুত আলোচনায় বসতে প্রস্তুত।
২৩ মাস ধরে চলমান গাজা সংঘাতে ইসরাইলের হামলায় ইতোমধ্যে ৬৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। শান্তি প্রতিষ্ঠায় একাধিক দফা আলোচনা হলেও তা থমকে ছিল, কারণ হামাসের পক্ষ থেকে সব জিম্মি মুক্তির প্রস্তাবের বিপরীতে ইসরাইল অস্ত্রসমর্পণসহ অতিরিক্ত শর্ত দেয়।
রোববার ট্রাম্প তার মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, “ইসরাইলিরা আমার শর্তগুলো মেনে নিয়েছেন। এখন হামাসেরও মেনে নেওয়ার সময়। মেনে না নিলে পরিণতি কী হবে, সে বিষয়ে হামাসকে আমি সতর্ক করেছি। এটি আমার শেষ সতর্কবার্তা।”
তবে ট্রাম্প তার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের শর্তগুলো খোলাসা করেননি। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র একাধিকবার দাবি করেছে, ইসরাইল শর্ত মেনে নিয়েছে, কিন্তু বাস্তবে গাজায় হামলা অব্যাহত থেকেছে। সম্প্রতি ইসরাইল গাজা শহর দখলের জন্য বড় ধরনের অভিযান শুরু করেছে।
টাইমস অব ইসরাইল-এর একটি প্রতিবেদনে ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের সম্ভাব্য কাঠামোর কথা তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতির প্রথম দিনেই গাজায় আটক সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে। এর বিনিময়ে ইসরাইলের কারাগারে বন্দি হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হবে। যুদ্ধবিরতির সময় ইসরাইল গাজায় হামলা স্থগিত রাখবে এবং ট্রাম্পের তত্ত্বাবধানে চূড়ান্তভাবে সংঘাত শেষ করতে আলোচনা শুরু হবে।
ইসরাইল জানিয়েছে, গাজায় এখনও ৫০ জন জিম্মি রয়েছে, যাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হয়।
হামাস রোববার এক বিবৃতিতে জানায়, “ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে আগ্রাসন বন্ধের যেকোনো উদ্যোগকে স্বাগত জানায় হামাস।” তারা দ্রুত আলোচনায় বসার আগ্রহ প্রকাশ করে, তবে এর বিনিময়ে হামলা বন্ধ ও সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি স্পষ্টভাবে নিশ্চিত করার দাবি জানায়। একইসঙ্গে তারা স্বাধীন ফিলিস্তিনিদের নিয়ে এমন একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেয়, যারা সংঘাত পরবর্তী গাজা পরিচালনার দায়িত্ব নিতে পারবে।
এর আগেও ট্রাম্প একাধিকবার হামাসকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। গত ২৫ আগস্ট তিনি বলেছিলেন, তিন সপ্তাহের মধ্যে এই সংঘাত “চূড়ান্তভাবে শেষ” হবে।
এছাড়া ক্ষমতায় বসার পর তিনি গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে সেখানে একটি “মধ্যপ্রাচ্যের বিনোদনকেন্দ্র” গড়ে তোলার কথাও বলেন। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনিদের ব্যাপকহারে বাস্তুচ্যুত করার প্রস্তাব ছিল, যা ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সাদরে গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, “যেসব ফিলিস্তিনি স্বেচ্ছায় গাজা ছাড়তে চান, তাদের সেই সুযোগ দেওয়া হবে।” তবে বিশ্লেষকদের মতে, ইসরাইলের লাগাতার বোমা হামলার কারণে ফিলিস্তিনিরা বাধ্য হয়েই গাজা ছাড়তেন।