
গাজার রক্তাক্ত সংকটে সাড়া দিয়ে মানবিক সহায়তায় এগিয়ে এসেছে ইন্দোনেশিয়া। মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশটি তাদের জনবসতিহীন গালাং দ্বীপে গড়ে তুলছে একটি চিকিৎসা কেন্দ্র, যেখানে গাজা থেকে আনা প্রায় ২ হাজার আহত ফিলিস্তিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র হাসান নাসবি এ উদ্যোগের কথা সাংবাদিকদের জানান।
তিনি বলেন, "ইন্দোনেশিয়া প্রায় ২০০০ গাজাবাসীকে চিকিৎসা সহায়তা দেবে; যারা যুদ্ধের শিকার হয়েছে, আহত হয়েছে এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে। এই চর্চার কখনো ব্যতিক্রম হবে না বলেও তিনি মনে করেন।"
মুখপাত্র আরও জানান, চিকিৎসা কার্যক্রমটি সুমাত্রা দ্বীপের নিকটবর্তী এবং সিঙ্গাপুরের দক্ষিণে অবস্থিত গালাং দ্বীপে চালু করা হবে। এখানে শুধু আহতদের চিকিৎসাই নয়, তাদের পরিবারের সদস্যদের অস্থায়ী আশ্রয়ও নিশ্চিত করা হবে। রোগীদের সুস্থ হওয়ার পর তাদের গাজায় ফিরিয়ে নেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকে গাজায় ধারাবাহিকভাবে মানবিক সহায়তা পাঠিয়ে যাচ্ছে ইন্দোনেশিয়া। গাজার স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলমান দখলদারিত্বের সহিংসতায় এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
দেশটির এই উদ্যোগটি এসেছে এমন এক সময়, যখন ইন্দোনেশিয়ার ধর্মীয় নেতারা কয়েক মাস ধরেই গাজার জন্য আরও কার্যকর সহায়তার আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন। প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো গাজাবাসীদের জন্য আশ্রয় ও চিকিৎসা সুবিধা দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত সেই চাপেরই প্রতিফলন বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।
এদিকে আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অনেকে ইন্দোনেশিয়ার এই প্রস্তাবকে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনার সঙ্গে তুলনা করছেন, যেখানে ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে স্থায়ীভাবে সরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।
তবে বিষয়টি স্পষ্ট করে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তারা মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানে 'দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান'-এর পক্ষপাতী এবং ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার যেকোনো প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেয়।
উল্লেখ্য, গালাং দ্বীপে ২০২০ সালে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের জন্য একটি হাসপাতাল চালু করা হয়েছিল। এর আগে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দ্বীপটি ছিল জাতিসংঘের একটি বিশাল শরণার্থী শিবির, যেখানে ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল।