
নেপালে সরকার পতনের পর প্রতিবেশী দেশ ভারতেও ছাত্র আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে। এবার উত্তাল আসাম। মোড়ান সম্প্রদায়ের ‘তফসিলি উপজাতি’ (এসটি) স্বীকৃতির দাবিতে বুধবার রাজ্যের তিনসুকিয়া জেলায় বিশাল বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ছে। বিহারে চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার আসাম রাজ্যে শুরু হয়েছে ব্যাপক গণআন্দোলন।
গত বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) তিনসুকিয়া জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রায় ২০ হাজার মোড়ান জনগোষ্ঠীর মানুষ রাস্তায় নামেন। তাদের দাবি - মোড়ানদের অবিলম্বে ‘তফসিলি উপজাতি’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে।
এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে অল মোড়ান স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (এএমএসইউ)। ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে তালাপ, কাকোপাথার এবং মার্ঘেরিটায় বিক্ষোভের পর তারা তিনসুকিয়া শহরে বিশাল সমাবেশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আসন্ন আসাম সফরের মাত্র তিন দিন আগে এই বিক্ষোভ শহরজুড়ে ব্যাপক সাড়া ফেলে।
বিক্ষোভকারীরা বরগুড়ি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের মাঠ থেকে মিছিল শুরু করেন। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে বিপুল সংখ্যক মানুষ এতে অংশ নেন। শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে তারা সমাবেশস্থলে জড়ো হন।
সমাবেশে সংগঠনের সভাপতি পোলিন্দ্র বরা বলেন, "প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বিজেপি সরকার গঠনের ১০০ দিনের মধ্যে মোড়ানসহ আরও পাঁচটি সম্প্রদায়কে এসটি মর্যাদা দেওয়া হবে। কিন্তু ১০ বছর কেটে গেলেও কিছুই হলো না। সরকার আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে যদি আমাদের এসটি মর্যাদা ও ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত স্বায়ত্তশাসনের দাবি পূরণ না হয়, আমরা আরও তীব্র আন্দোলনে যাবো।"
বিক্ষোভকারীরা সরকারকে ৭২ ঘণ্টার সময়সীমা দিয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে দাবি পূরণে কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ না নিলে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে রাজ্যজুড়ে অর্থনৈতিক অবরোধ শুরু করার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে।
এএমএসইউ সাধারণ সম্পাদক জয়কান্ত মোড়ান বলেন, "কংগ্রেস আমাদের ঠকিয়েছে, আঞ্চলিক দল আসাম গণপরিষদ (এজিপি) ঠকিয়েছে, আর এখন বিজেপিও একই কাজ করছে। আমাদের সবসময় রাজনৈতিক খেলোয়াড় হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। যথেষ্ট হয়েছে।"
তিনি জানান, মোদীর সফরের আগে কেন্দ্রীয় সরকারকে মোড়ানদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের স্পষ্ট সময়সীমা ঘোষণা করতে হবে।
এদিনের মূল সমাবেশ ছাড়াও তিনসুকিয়া থানার চারিআলি এলাকায় আরেকটি প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ছাত্রনেতারা সম্প্রদায়ের মানুষদের আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
আন্দোলন আরও তীব্র হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে মোড়ান ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা বলেছেন, এবারের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবেই।