
এই গ্রীষ্মে ইউরোপজুড়ে ‘অবাধ্য’ পর্যটকদের নিয়ন্ত্রণে কঠোর জরিমানা কার্যকর করেছে বেশ কয়েকটি দেশ। নতুন বিধিনিষেধের আওতায় খালি পায়ে হাঁটা, স্যান্ডেল পরে গাড়ি চালানো, অপ্রয়োজনীয় পোশাক, প্রকাশ্যে সাঁতার, কিংবা বিমানে নিয়ম ভাঙার মতো বিষয়গুলোকেও অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
তুরস্কের আন্তালিয়ায়, বিমান থামার আগেই সিটবেল্ট খোলার কারণে যাত্রীদের ৬২ ইউরো (৫৪ পাউন্ড) পর্যন্ত জরিমানা গুণতে হতে পারে। এই ধরণের শাস্তির মধ্য দিয়েই শুরু হতে পারে কারও ছুটি।
পর্তুগালের আলবুফেইরায় সৈকতের বাইরে সাঁতারের পোশাক পরলে দেড় হাজার ইউরো পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। স্পেনের ম্যালোর্কা বা ইবিজা দ্বীপে জনসমক্ষে মদ্যপান করলে তিন হাজার ইউরো পর্যন্ত জরিমানা ধার্য করা হয়েছে। এমনকি সূর্যস্নানের সানবেড বেশি সময় ধরে দখলে রাখা বা তোয়ালে ফেলে যাওয়ার মতো ছোটখাটো বিষয়েও শাস্তি হতে পারে।
অনেকে এটাকে পর্যটকদের ওপর বাড়তি চাপ হিসেবে দেখলেও কর্তৃপক্ষের দাবি, এসব ব্যবস্থা মূলত স্থানীয়দের নিরাপত্তা ও পর্যটকদের দায়িত্বশীল আচরণে উৎসাহ দিতে নেওয়া হয়েছে। লন্ডনে স্প্যানিশ ট্যুরিজম অফিসের জেসিকা হার্ভে টেলর বলেন, “নিয়মগুলো তালিকাভুক্ত করার সময় কঠোর এবং শাস্তিমূলক শোনালেও দায়িত্বশীল এবং সহানুভূতিশীল ভ্রমণকে উৎসাহিত করার জন্য করা হয়েছে। ছুটির দিনে দায়িত্বশীল আচরণকারী সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অভিজ্ঞতা ভালো রাখার জন্যই এগুলো তৈরি করা হয়েছে।”
স্পেনের মালাগা শহরে চালু হয়েছে পর্যটকদের জন্য ১০ দফা আচরণবিধি ‘ইমপ্রুভ ইয়োর স্টে’, যা বাস, বিলবোর্ড ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করা হচ্ছে। এতে পোশাক, শব্দদূষণ, আবর্জনা এবং ই-স্কুটার ব্যবহারের বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে। এ নিয়ম ভাঙলে সর্বোচ্চ ৭৫০ ইউরো (৬৫০ পাউন্ড) পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
পর্তুগালের আলবুফেইরাতেও একই ধরনের বিধিনিষেধ কার্যকর হয়েছে—যেখানে জনসমক্ষে নগ্নতা, মূত্রত্যাগ বা শপিং কার্ট ফেলে রাখা নিষিদ্ধ। স্থানীয়রা বলছে, এ নিয়ম শুধু কাগজে-কলমেই নয়, বাস্তবেও কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে, পুলিশ তৎপর রয়েছে।
এছাড়া, পরিবেশগতভাবে স্পর্শকাতর এলাকা যেমন গ্যালাপাগোস বা ল্যাপল্যান্ডেও দীর্ঘদিন ধরেই আচরণবিধি চালু রয়েছে। তবে এখন মূলধারার সৈকত ও রিসোর্ট এলাকাতেও একই ধারা অনুসরণ করা হচ্ছে। ম্যালোর্কার ক্যালভিয়া শহরের মেয়র হুয়ান আন্তোনিও আমেঙ্গুয়াল বলেন, “আমাদের দুটি প্রধান ধারণা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে; একটি হলো পরিবেশ সুরক্ষা এবং অন্যটি হলো সংরক্ষণ; সঙ্গে পর্যটন আমাদের সমাজের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা নিশ্চিত করাও লক্ষ্য,” তিনি আরও বলেন, “পর্যটন কখনোই স্থানীয় নাগরিকদের ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।”
জরিমানাগুলোর বিস্তারিত:
স্পেন, গ্রীস, ইতালি, ফ্রান্স ও পর্তুগালে খালি পায়ে বা চপ্পল পরে গাড়ি চালালে ৩০০ ইউরো (২৬১ পাউন্ড) পর্যন্ত জরিমানা। বার্সেলোনা, আলবুফেইরা, স্প্লিট, সোরেন্টো, ভেনিস ও কানে সমুদ্রসৈকতের বাইরে সাঁতারের পোশাকে ঘোরাফেরা করলে ১,৫০০ ইউরো (১,৩০৭ পাউন্ড)। ম্যালোর্কা, ইবিজা, ম্যাগালুফ ও ক্যানারি দ্বীপে জনসমক্ষে মদ্যপান করলে ৩,০০০ ইউরো (২,৬১৫ পাউন্ড)। গ্রীসে সমুদ্রসৈকত থেকে খোলস বা নুড়ি তোলার জন্য ১,০০০ ইউরো (৮৭১ পাউন্ড)। ভেনিসে খালে সাঁতারের জন্য ৩৫০ ইউরো (৩০৫ পাউন্ড)। রায়ানএয়ার ‘বিঘ্ন’ সৃষ্টিকারী যাত্রীদের থেকে ৫০০ ইউরো (৪৩৫ পাউন্ড) আদায় করতে পারে। ইতালির সিনকে তেরতে ঢাল বেয়ে অপ্রয়োজনীয়ভাবে উঠলে ২,৫০০ ইউরো (২,১৮০ পাউন্ড)। ফ্রান্সে সৈকত বা খেলার মাঠে ধূমপানে আগুন ধরলে ৯০ ইউরো (৭৮ পাউন্ড) জরিমানা।
এছাড়াও, জরিমানার তালিকা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউরোপে পর্যটনবিরোধী আন্দোলন বেড়েছে, যার জেরে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পর্যটকদের বিরক্ত করলেও স্থানীয়দের স্বার্থ রক্ষায় এগিয়ে এসেছে।
সূত্র: বিবিসি নিউজ বাংলা