
জাতীয় নির্বাচনের হাওয়া দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলো প্রস্তুতি শুরু করেছে। এবার নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনী শুধু ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে নয়, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতো পূর্ণ ক্ষমতায় দায়িত্ব পালন করবে। এজন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ) সংশোধন করে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে প্রস্তাব পাঠাচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, “আমরা আরপিও সংশোধন করে সেখানে ল’এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি হিসাবে সেনাবাহিনীকেও অন্তর্ভুক্ত করেছি। আগে ছিল না। আগে শুধু পুলিশ, কোস্টগার্ড, বিজিবি ছিল। এখন সেনাবাহিনীকেও অন্তর্ভুক্ত করা হলো। প্রস্তাবটি এ সপ্তাহের মধ্যেই সরকারের কাছে পাঠানো হবে।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের দিক থেকে খসড়া পাঠানো হলে, সরকার সিদ্ধান্ত নেবে কতটা অনুমোদন দেওয়া যায়।”
২০০১ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আরপিওতে সশস্ত্র বাহিনীকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এর ফলে তারা নির্বাচনি অপরাধের জন্য বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করতে পারতেন। তবে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এই সংশোধনী বাতিল করা হয়, ফলে সেনাবাহিনী নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পূর্ণ ক্ষমতা পাচ্ছিল না।
এবার ইসি প্রস্তাব দিয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সব নির্বাচনে সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পূর্ণ ক্ষমতায় দায়িত্ব পালন করবে। কমিশনের এই প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে কার্যকর হবে। মাছউদ জানিয়েছেন, “নির্বাচন কমিশন সর্বসম্মতভাবে এ প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।”
নির্বাচনে দেড় লাখের বেশি পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও আনসার মোতায়েন থাকলেও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, ৮০ হাজারের বেশি সেনা সদস্য দায়িত্বে থাকবে। সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, “নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষা থাকবে না। কমিশন সরাসরি সেনা সদর দপ্তরে চাহিদা জানিয়ে নির্বাচনকালীন দায়িত্বে ব্যবহার করতে পারবে।”
সংশোধনীর ফলে নির্বাচনের দায়িত্ব পাওয়া সেনা সদস্যরা ম্যাজিস্ট্রেসি ও পুলিশের ক্ষমতা একসঙ্গে পাবেন। আগে তারা শুধু স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে অবস্থান করতেন, আর কোনো ব্যবস্থা নিতে হলে ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমোদন প্রয়োজন হতো। মেজর এমদাদুল ইসলাম বলেন, “এবার তারা স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, যা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ কমাবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ মনে করেন, “বাংলাদেশের বাস্তবতায় সেনাবাহিনীকে পূর্ণ ক্ষমতায় দায়িত্ব দেওয়া জরুরি। এটা নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”
আইনজীবী অ্যাডভোকেট আহসানুল করিমও জানিয়েছেন, “আগে সেনা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করতো। ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমোদনের ওপর নির্ভর করতে হতো। আরপিও সংশোধনী হলে তারা স্বাধীনভাবে ব্যবস্থা নিতে পারবে।”
ইসি মাছউদ বলেন, “মানুষের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। তাই এবার সব নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। তারা অন্যান্য বাহিনীর মতো আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ফোর্স চাইতে পারবে এবং দায়িত্ব পালন করবে। এখন এটি আইনের অধীনে।”