
জাতীয় পার্টিকে (জাপা) ‘সার্বভৌমত্বের শত্রু’ আখ্যা দিয়ে ১৪ দলকে নিষিদ্ধে অনাগ্রহ ও বিপ্লবীদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের গ্রহণযোগ্যতা ও সক্ষমতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অনুষ্ঠিত জুলাই মঞ্চের এক সমাবেশে এসব মন্তব্য উঠে আসে।
এই সমাবেশে বক্তারা বলেন, গণহত্যার বিচার, জাতীয় পার্টি ও ১৪ দল নিষিদ্ধকরণ, রাষ্ট্রীয় প্রশাসন থেকে ফ্যাসিবাদী চক্র নির্মূল, জুলাই বিপ্লবের নেতা নুরুল হক নুরের ওপর হামলার বিচার এবং জুলাইযোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে তারা এই কর্মসূচি আয়োজন করেছেন।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের যে প্রত্যাশা ছিল, তার খুব সামান্যই পূরণ করতে পেরেছে। বিপ্লবীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে তারা নিজেরাও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছেন। জুলাইয়ের অন্যতম নেতা নুরুল হক নুরের ওপর পুলিশ, সেনাবাহিনী ও জাতীয় পার্টির হামলার বিচার না হওয়া একটা অশনিসংকেত। এই বর্বরোচিত হামলার বিচার না হলে জুলাইয়ের অন্য শরিকদেরও ভবিষ্যতে এমন হামলা ও জুলুমের মুখোমুখি হতে হবে। তাই সব দল ও মতকে ঐক্যবদ্ধ থেকে বিপ্লবীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা ও ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান রুখে দিতে হবে।”
জুলাই বিপ্লবে শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহীনা বেগম সরকারের ভূমিকায় হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও বিচারের বিষয়ে গাফিলতি করেছে। বিচারের নামে তারা টালবাহানা শুরু করেছে। জুলাই শহীদদের ব্যাপারে উদাসীনতা ও জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে না পারায় ব্যর্থতার দায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পদত্যাগ করা উচিত।”
সমাবেশে জুলাই মঞ্চের আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম তালুকদার অন্তর্বর্তী সরকারকে সরাসরি ‘বিপ্লব পরবর্তী সবচেয়ে বড় প্রতারণা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, “বিপ্লবের পর যে অন্তর্বর্তী সরকার করা হয়েছে, এটি বিপ্লবের পর একটা ‘বিগেস্ট স্ক্যাম’। যারা গত ১৭ বছরের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে নূন্যতম ভূমিকা রাখেনি, এমন লোকদের উপদেষ্টা করার মধ্য দিয়ে বিপ্লবকে ধারণকারীদের রাষ্ট্র পরিচালনায় বিরত রাখা হয়েছে। ফলে রাষ্ট্রযন্ত্র এখনও পুরোপুরি ফ্যাসিবাদের দখলে। এই দখলের ফলে তারা সুনিপুণভাবে গত ১ বছরে বিপ্লবকে বিতর্কিত করে ছেড়েছে। বিপ্লবের আশা-আকাঙ্ক্ষার কোনো প্রতিফলন না হওয়ায় অবিলম্বে এই সরকার পুনর্গঠন করার দাবি জানান তিনি।”
জুলাই মঞ্চের মুখপাত্র সাকিব হোসাইন অভিযোগ করেন, “জাতীয় পার্টি ও ১৪ দল দেশের সার্বভৌমত্বের শত্রু। তারা বাংলাদেশের নাগরিকদের ভোটাধিকার ও নাগরিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তারা বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভিন্ন দেশের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে রাষ্ট্রের সঙ্গে দেশদ্রোহ করেছে।”
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জুলাই বিপ্লবে শহীদদের স্বজনসহ জুলাইকেন্দ্রিক নানা সংগঠনের নেতারা। সংহতি জানান জাগপা, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), এনপিপি, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, গণঅধিকার পরিষদসহ একাধিক রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা।