
কয়েক বছরের বিরতির পর আবারও যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির মেয়রের সরকারি বাসভবন ‘গ্রেসি ম্যানশনে’ ফিরছে এক ফার্স্ট লেডি। এবারের নতুন বাসিন্দা হচ্ছেন নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির স্ত্রী, ২৮ বছর বয়সী সিরীয় বংশোদ্ভূত শিল্পী রামা দুয়াজি—যিনি সাধারণত প্রচারের আলো থেকে দূরে থাকেন।
মেয়র নির্বাচনে সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে পরাজিত করে বিজয় অর্জনের পর উচ্ছ্বাস ভাগাভাগি করতে নিজের স্ত্রী রামা দুয়াজি ও বাবা-মাকে মঞ্চে ডেকে নেন মামদানি।
২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান রামা দুয়াজি। চলতি বছরের শুরুতে নিউইয়র্ক সিটি হলে এক অনুষ্ঠানে মামদানির সঙ্গে তার বিয়ে সম্পন্ন হয়। মার্কিন গণমাধ্যমগুলোর তথ্যমতে, মামদানির নির্বাচনী প্রচারণায় রামা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন—তারই নকশায় তৈরি হয়েছিল প্রচারণার সাহসী প্রতীকী সামগ্রী, যেখানে ব্যবহৃত হয়েছিল হলুদ, কমলা ও নীল রঙের সৃজনশীল সংমিশ্রণ।
স্বামীর প্রচারণায় নেপথ্য ভূমিকা রাখলেও প্রচারের আলোয় আসেননি রামা। তিনি কখনো টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে অংশ নেননি, এমনকি কোনো আলোচিত ম্যাগাজিন প্রোফাইলেও রাজি হননি। তবে তার শিল্পকর্ম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উপস্থিতি ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলেছে মামদানির জনপ্রিয়তায়।
রামার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে মধ্যপ্রাচ্যের নারীদের জীবন, ফিলিস্তিনের সংগ্রাম এবং মানবিক বিষয় নিয়ে নানা শিল্পকর্ম দেখা যায়। গত জুনে ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারির দিন তিনি মামদানির সঙ্গে যুগল ছবি পোস্ট করেছিলেন।
মঙ্গলবার মামদানির বিজয়ের মধ্য দিয়ে রামা দুয়াজিও ইতিহাস গড়েছেন—তিনি এখন নিউইয়র্ক সিটির প্রথম ‘জেন-জি’ ফার্স্ট লেডি।
রামা দুয়াজি কে?
সিরীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান শিল্পী রামা দুয়াজি বর্তমানে ব্রুকলিনে বসবাস করেন। তার প্রচারণা দলের তথ্য অনুযায়ী, তিনি জাতিগতভাবে সিরীয় হলেও জন্মেছেন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে এবং শৈশবের কিছু সময় কাটিয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে।
কয়েক বছর আগে ডেটিং অ্যাপ ‘হিঞ্জ’-এর মাধ্যমে মামদানির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে দুবাইয়ে ছোট পরিসরে তাদের বাগদান সম্পন্ন হয় এবং চলতি বছরের শুরুতে নিউইয়র্ক সিটি ক্লার্ক অফিসে বিয়ে করেন।
গত ১২ মে ইনস্টাগ্রামে এক পোস্টে মামদানি লিখেছিলেন, “রামা শুধু আমার স্ত্রী নন, তিনি এমন এক অসাধারণ শিল্পী যিনি নিজের পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার যোগ্য।” তিনি আরও জানান, তাদের বিয়ে হয়েছিল তিন মাস আগে।
রামা নিউইয়র্কের ‘স্কুল অব ভিজ্যুয়াল আর্টস’ থেকে ইলাস্ট্রেশনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তার কাজ প্রকাশিত হয়েছে দ্য নিউ ইয়র্কার, দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট, বিবিসি, অ্যাপল, স্পটিফাই, ভাইস এবং লন্ডনের টেট মডার্ন-এ।
তার শিল্পকর্মে প্রায়ই ফিলিস্তিনপন্থি বার্তা উঠে আসে—যেখানে ইসরায়েলি আগ্রাসন, জাতিগত নিপীড়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার সমালোচনা প্রতিফলিত হয়। এক অ্যানিমেশন ভিডিওতে তিনি নিউইয়র্কের কিছু দাতব্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধে অর্থায়নের অভিযোগ তোলেন, যা মামদানি নিজেও শেয়ার করেছিলেন।
গায়িকা ও পিয়ানিস্ট নিনা সিমোনের উদ্ধৃতি টেনে রামা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “সময়কে প্রতিফলিত করাই একজন শিল্পীর দায়িত্ব।” বর্তমানে ইনস্টাগ্রামে তার অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৩৫ হাজার, যেখানে তিনি তার শিল্পকর্ম, রাজনৈতিক মতামত এবং ব্যক্তিগত অর্জন ভক্তদের সঙ্গে ভাগ করে নেন।
সূত্র: এনডিটিভি