
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা (ভিওএ) থেকে প্রায় ৫০০ কর্মীকে বরখাস্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি রোববার (৩১ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভিওএ-এর মূল প্রতিষ্ঠান ইউএস এজেন্সি ফর গ্লোবাল মিডিয়ার (ইউএসএজিএম) অধীনে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
হোয়াইট হাউস দীর্ঘদিন ধরেই ভয়েস অব আমেরিকাকে “উগ্রপন্থি” হিসেবে চিহ্নিত করে আসছে। এবার সেই সমালোচনার ধারাবাহিকতায় সংস্থাটিকে সীমিত করে আনার অংশ হিসেবে ছাঁটাইয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ইউএসএজিএম-এর ভারপ্রাপ্ত প্রধান কারি লেক এক বিবৃতিতে বলেন, “এই সিদ্ধান্ত ফেডারেল আমলাতন্ত্র কমাবে, সংস্থার কার্যকারিতা বাড়াবে এবং মার্কিন করদাতাদের অর্থ সাশ্রয় করবে।”
তবে কর্মচারীদের ইউনিয়ন এই সিদ্ধান্তকে অবৈধ বলে আখ্যা দিয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি প্রচারণার মোকাবিলায় গঠিত ভিওএ বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক সম্প্রচারমাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়।
ইউএসএজিএম জানিয়েছে, মোট ৫৩২ টি পদ বাতিল করা হবে, যার মধ্যে বেশিরভাগই ভয়েস অব আমেরিকায়। এই ছাঁটাই কার্যকর হলে প্রতিষ্ঠানটিতে মাত্র ১০৮ জন কর্মী অবশিষ্ট থাকবেন। এ তথ্য আদালতে দাখিল করা নথিতে উল্লেখ রয়েছে।
এর আগে গত জুনে কারি লেক ৬৩৯ জন কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেন। তবে প্রক্রিয়াগত ত্রুটির কারণে সে সময় ছাঁটাইয়ের নোটিশ প্রত্যাহার করা হয়। কিছু কর্মী সেই ঘোষণার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
বিবিসি জানায়, সম্প্রতি একটি আদালতের রায়ের পর শুক্রবার রাতে আবারও নতুন করে ছাঁটাইয়ের ঘোষণা আসে। আদালত রায়ে উল্লেখ করে, ভয়েস অব আমেরিকার পরিচালক মাইকেল আব্রামোভিটজকে বরখাস্ত করার ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসন যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করেনি। সেই সঙ্গে কারি লেককে আইনজীবীদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়।
এই রায়কে ঘিরেই কর্মীদের একটি দল ভিওএ বন্ধের প্রচেষ্টা ঠেকাতে মামলা করেন। এক বিবৃতিতে তারা বলেন, “আমরা লেকের ধারাবাহিক আক্রমণকে ঘৃণ্য মনে করছি। আমরা আশা করছি আদালতে তার জবানবন্দিতে প্রকাশ পাবে, তিনি কংগ্রেসনির্ধারিত নিয়ম মেনে সংস্থাটিকে ভেঙে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন কি না। এখন পর্যন্ত তার প্রমাণ আমরা দেখিনি। তাই আইনের আওতায় আমাদের অধিকারের জন্য আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।”
বর্তমানে ভিওএ-র অধিকাংশ কর্মীই গত মার্চ থেকে প্রশাসনিক ছুটিতে রয়েছেন। তবে ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ শুরু হলে ফারসি ভাষার কিছু সাংবাদিককে ফের কাজে ডাকা হয়। অন্যদিকে, মায়ামি থেকে স্প্যানিশ ভাষায় সংবাদ প্রচারকারী কিউবা সম্প্রচার বিভাগ এই ছাঁটাইয়ের আওতায় পড়বে না।
সমালোচকরা বলছেন, এই পদক্ষেপ সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আঘাত এবং যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক প্রভাব হ্রাস করতে পারে।
ভয়েস অব আমেরিকা বর্তমানে টেলিভিশন, রেডিও ও অনলাইন মাধ্যমে প্রায় ৫০টি ভাষায় সংবাদ প্রচার করে।