 25/Titumir college.webp)
দ্রুত দাবি বাস্তবায়ন করা না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন রাজধানীর তিতুমীর কলেজের ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ দাবি করা শিক্ষার্থীরা। তারা বলেছেন, জনভোগান্তি করতে চাই না, অল্প সময়ের জন্য গুলশান ও মহাখালী অবরোধ করে বার্তা দেয়ার চেষ্টা করছি আমরা।
শুক্রবারের ধারাবাহিকতায় শনিবারও (১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর গুলশান-১ আটকে সড়কে অবস্থান নেয় তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা। তারা এদিন বিকেল চারটার পর থেকে তাদের কর্মসূচি শুরু করেন।
এরপর সাতটার দিকে গুলশান সড়ক ছেড়ে দিয়ে মহাখালীর আমতলীতে ফিরে আসেন শিক্ষার্থীরা।
পরে তারা সাংবাদিকদের জানান, জনদুর্ভোগ তৈরি না করা ছাড়া রাষ্ট্র কথা বলতে চায় না, সরকারকে এ ধারা থেকে বের হতে হবে। আমাদের ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’ কর্মসূচি চলবে।
তিতুমীর ঐক্যের মাহমুদ মুক্তার কথা এসময় বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নোটিশ প্রত্যাখ্যান করেছে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা।’
এর আগে এক বিবৃতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের ঘোষণা আদায়ে সময় বেঁধে দিয়ে আন্দোলন করার যৌক্তিকতা নেই। একইসাথে আন্দোলনে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধৈর্য ধারণ করার অনুরোধ করা হয় বিবৃতিতে।
মাহমুদ মুক্তা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘টালবাহানা’ কথা বলে ‘দাঙ্গা’ লাগাবেন না, কিছু হলে তার জন্য দায়ী থাকবে সরকারের অকার্যকর প্রশাসন।
শিক্ষার্থীরা জানান, রাতে আমরণ অনশন কর্মসূচি চলমান থাকবে। পাশাপাশি তিতুমীর কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ করে রাখা হবে।
এ ছাড়া রোববার সকাল ১১টা থেকে মহাখালীর রেলপথ ও গুলশান-আমতলী-মহাখালী সড়ক অবরোধ করার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে শুক্রবার দিনভর মহাখালীর আমতলী ও ওয়ারলেস গেটে অবস্থান শেষে রাতে গুলশান-১ আটকে সড়কে অবস্থান নেয় তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে তারা কলেজের সামনে ফিরে এসে দ্রুত তাদের সাত দফা বাস্তবায়নের আল্টিমেটাম দেন। এসময় তারা জানান শনিবার বিকেল চারটার মধ্যে দাবি মেনে নেওয়া না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’ কর্মসূচি পালন করা হবে। রেল ও সড়কপথ এ কর্মসূচির আওতাভুক্ত থাকবে।
গতকাল শিক্ষার্থীরা জানিয়েছিলেন, বিশ্ব ইজতেমার জন্য ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের কথা বিবেচনা করে শনিবার ভোর ৬টা থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত ব্যারিকেড শিথিল থাকবে।
সময় বেঁধে দিয়ে আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই, তিতুমীর প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সময় বেঁধে দিয়ে আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই, তিতুমীর প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়
গত শুক্রবার সকালে ঘোষণা দেওয়া হয়, অনশনরত শিক্ষার্থীরা কলেজের প্রধান ফটকে জুমার নামাজ আদায় করবেন। পরে প্রায় দেড়শ’ শিক্ষার্থী একসঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. নুরুজ্জামানের নেতৃত্বে সরকারের একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শিপ্রা রানী মণ্ডলসহ কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা।
আজও গুলশানে সড়ক আটকে তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের অবস্থানআজও গুলশানে সড়ক আটকে তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের অবস্থান
মো. নুরুজ্জামান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রায় আড়াই ঘণ্টা কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা করেন। তারপরও শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি স্থগিতে রাজি হননি। তারা তিতুমীর কলেজকে ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়’ করার তাৎক্ষণিক ঘোষণা দেওয়ার দাবি করেন।
দীর্ঘ সময় পর এক পর্যায়ে যুগ্ম সচিব নুরুজ্জামান বলেন, ‘তোমাদের দাবি যে অযৌক্তিক– সেটা তো কেউ বলছেন না। কিন্তু এটি একটি প্রক্রিয়াধীন বিষয়। তোমরা ২৮ বছর ধরে আন্দোলন করছো। এটা তোমরা আদায় করেই ঘরে ফিরবা, সেটাও আমরা জানি।’
তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের সাত দফা দাবি হলো:
তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করতে হবে।
তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠন করে ২০২৪-২০২৫ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ নতুবা অনতিবিলম্বে শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসিক খরচ বহন করতে হবে।
২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ন্যূনতম দুইটি বিষয় ‘আইন’ এবং ‘জার্নালিজম’ বিষয় সংযোজন করতে হবে।
একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন পিএইচডিধারী শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।
শিক্ষার গুণগতমান শতভাগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আসন সংখ্যা সীমিত করতে হবে।
আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগার বিনির্মাণের লক্ষ্যে জমি ও আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিতকরণ করতে হবে।