
দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক ফার্স্ট লেডি কিম কিওন হি-কে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ। শেয়ারবাজারে অনিয়ম এবং ঘুষ গ্রহণসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে, যদিও আদালতে তিনি এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ১৩ আগস্ট (বুধবার) কিম কিওন হি-র গ্রেপ্তারের বিষয়টি সামনে আসে। এর আগে, তার স্বামী এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলও কারাগারে গেছেন, যিনি বর্তমানে একই রকম আইনি জটিলতায় বন্দি অবস্থায় রয়েছেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটি আরও জানায়, ৫২ বছর বয়সী কিম মঙ্গলবার আদালতে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে চলা শুনানিতে অংশ নেন। শুনানিতে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে বিচারক মামলার প্রমাণপত্র ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা তুলে ধরে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন এবং তাকে পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
এই ঘটনা দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে একটি নতুন মাইলফলক তৈরি করেছে। এই প্রথমবার, একটি সাবেক রাষ্ট্রপতি ও তার স্ত্রী একই সময়ে কারাগারে বন্দি হলেন।
প্রসঙ্গত, সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল ২০২৪ সালে সামরিক আইন জারির ব্যর্থ চেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন। তার সে পদক্ষেপ দেশজুড়ে ব্যাপক রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করে এবং শেষমেশ তাকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করে।
কিম কিওন হি-র বিরুদ্ধে মামলায় বলা হয়েছে, তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বিএমডব্লিউ গাড়ি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ‘ডয়েচ মোটর্স’-এর শেয়ার মূল্যে কারসাজির মাধ্যমে ৮০০ মিলিয়ন উওন (প্রায় ৫ লাখ ৭৮ হাজার মার্কিন ডলার) অবৈধভাবে উপার্জন করেন। যদিও এই ঘটনা ইউনের প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগের, তবে পরবর্তী সময়ে তা পুরো প্রশাসনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
আরও অভিযোগ রয়েছে, কিম বিতর্কিত ইউনিফিকেশন চার্চের কাছ থেকে ব্যবসায়িক সুবিধার প্রতিদানে দুটি শ্যানেল ব্যাগ ও একটি হীরার নেকলেস ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করেন। এছাড়া, ২০২২ সালের উপনির্বাচন ও ২০২4 সালের সাধারণ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রক্রিয়াতেও তার হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে।
বিবিসির তথ্যমতে, মঙ্গলবার কিম কালো স্যুট ও স্কার্ট পরে আদালতে উপস্থিত হন। গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বলেন, “আমি কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নই, তবুও সমস্যার সৃষ্টি করার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।”
উল্লেখযোগ্যভাবে, ইউন প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময় বিরোধী দল কিমের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য বারবার বিশেষ কাউন্সেল গঠনের দাবি জানায়। তবে ইউন সেই বিল তিনবার ভেটো দেন, যার মধ্যে সর্বশেষ ভেটোটি ছিল ২০২৪ সালের নভেম্বরে, সামরিক আইন ঘোষণার মাত্র এক সপ্তাহ আগে।
অবশেষে, চলতি বছরের জুনে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে লি জে মিয়ং দায়িত্ব গ্রহণের পর বিশেষ কাউন্সেল গঠিত হয় এবং তদন্ত প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়া হয়।