
পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ দেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর নিরাপত্তা বৃদ্ধি দাবিতে আলোচনা সভা করেছে সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) ঢাকর পান্থপথের সেল সেন্টারের মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করা হয়।
সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক মো. মোস্তফা আল ইহযাযের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিচারপতি আব্দুস সালাম মামুন। প্রধান আলোচক ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আমছা আমিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক সচিব মো. জাকারিয়া, সাবেক রাষ্ট্রদূত মাসুদ মান্নান, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট ফরিদ আকবর। মুখ্য আলোচক ছিলেন এসজি কিবরিয়া দিপু। বক্তব্য দেন লেখক ও কলামিস্ট শরিফ ওবায়দুল্লাহ, আতাউল্লাহ খান, সরওয়ার হোসাইন, শরিফ শাকি, কোটা সংস্কার আনন্দের সমন্বয়ক জালাল আহম্মেদ, ছাত্র সমন্বয়ক প্রতিনিধি মু. জিয়াউল হক ও সাদমান সায়মন, আজিজুর রহমান মিন্টু, এমএ আউয়াল, মোস্তাক ভাসানী, মো. সাহিদুল ইসলাম, কবি সাহারা আনোয়ার।
সীমান্তে শহীদ হওয়া সামরিক ও বেসামরিক শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্যে দিয়ে সভা শুরু হয়।
সভায় বক্তারা বলেন, ‘দেশের মধ্যে একটি চক্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বসবাস করে দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পায়তারা করছে। এরা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করেনা। তাই, দেশ বিরোধী বহিঃশত্রুর সাথে যুক্ত হয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গোলযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা বেশকিছু দিন লক্ষ্য করছি, আমাদের প্রতিবেশী দেশ ও তাদের মিডিয়াগুলো আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নানাভাবে হস্তক্ষেপ করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করছে, এসব কিসের ইঙ্গিত? তা আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে এখুনি বিবেচনায় হবে।’
‘ইতিমধ্যে আমরা লক্ষ্য করেছি, পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত এলাকার আট জেলার বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে ভারত। বিএসএফের ডিআইজি (জেনারেল) কুলদীপ সিং ভারতীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার লক্ষ্যে থার্মাল ক্যামেরা, নাইট ভিশন ক্যামেরা, সিসিটিভি ক্যামেরা ও ড্রোনের সাহায্যে নজরদারি চালানো হচ্ছে, চেকপোস্টে বসানো হচ্ছে বায়োমেট্রিক লক। উত্তরবঙ্গের আট জেলায় সঙ্গে এক হাজার ৯৩৭ কিলোমিটার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে।’
বাংলাদেশের এই বিশাল সীমান্তবর্তী ভারতীয় এলাকাগুলোতে ড্রোনের সাহায্যে নজরদারি বৃদ্ধির আড়ালে ভারত কোন ষড়যন্ত্রমূলক চক্রান্তের ছক আঁকছে কিনা- বাংলাদেশ সরকারকে তা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানান সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
বক্তারা আরও বলেন, ‘মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান যুদ্ধে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি মংডু শহরসহ রাজ্যের প্রায় সম্পূর্ণ এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের প্রায় পৌনে ৩০০ কিলোমিটার সীমানার পুরোটাই এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আরাকান আর্মির মুখপাত্র ইউ খাইং থু খার নির্দেশে নাফ নদীর মিয়ানমারের অংশে অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ওই ঘোষণার পর থেকে নাফ নদীতে নৌ চলাচলে সতর্কতা জারি করেন বিজিবি, বৃদ্ধি করা হয়েছে বিজিবির টহল ও জনসাধারণকে মাইকিং করে সতর্ক করেন স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু, এমন প্রস্তুতি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক স্বল্প বলে আমরা মনে করছি। এমন স্বল্প প্রস্তুতির কারণে মিয়ানমার থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঘটানো বন্ধ করা সম্ভব হয়নি বলেও মনে করছি।’
‘গত ২২ ডিসেম্বর দুপুরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, ‘দুর্নীতির কারণে স্থল, জলসীমাসহ সীমান্তের নানা রুট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটছে; যা আটকানো খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।’ কিন্তু সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ মনে করেছে. সীমান্তে নিরাপত্তার সল্পতার কারণে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঘটছে; যা বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না এবং অনুপ্রবেশ ঘটা আরও বৃদ্ধি পাবে। কেননা, চলমান যুদ্ধে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা সহযোগী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি- এআরএ ও আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসাসহ কয়েকটি সংগঠনের অবস্থান ছিল জান্তা বাহিনীর পক্ষে; যা রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের মুখ্য কারণ হয়ে উঠেছে।’
সভায় বলা হয়, ‘বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের কয়েকটি সন্ত্রাসী সংগঠন রয়েছে আরাকান আর্মির সাথে সম্পৃক্ত। যারা দীর্ঘ দিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে আলাদা রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা করেছে এবং ওই অঞ্চলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে আসছে; যা বর্তমান পরিস্থিতিতে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের উদ্বেগের মুখ্য কারণ হয়ে উঠেছে। এ পরিস্থিতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসী গোষ্ঠিগুলো আপাতত শান্ত থাকলেও প্রকৃতপক্ষে তা তুষারের আগুনের মত চাপা পড়ে আছে এই আগুন যে কোন মুহূর্তে প্রতিবেশী ভারত ও মায়ানমারের আরাকান আর্মির সহযোগিতায় দাউ দাউ করে জ্বলে উঠতে পারে, ধ্বংস করে দিতে পারে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ সম্পূর্ণ চট্টগ্রাম অঞ্চল।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম রক্ষায় দ্রুত সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীদের নজরদারিতে আনতে পার্বত্য অঞ্চল থেকে অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চালাতে এ অঞ্চলে সেনাবাহিনী বৃদ্ধি ও প্রত্যাহারকৃত সেনা ক্যাম্পগুলো পুনঃস্থাপনের দাবি জানান তারা।
বক্তারা গত বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) সিলেটের জৈন্তাপুর সীমান্তে ভারতীয় খাসিয়াদের গুলিতে এক বাংলাদেশি কিশোর নিহত হওয়ার এক দিন পর দিন শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) সবুজ মিয়া নামের ২২ বছরের যুবককে গুলি করে হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং দ্রুত সীমান্ত হত্যা বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।