
রাশিয়া ও চীনের মধ্যকার সম্পর্ক ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি জানিয়েছেন, অর্থনীতি থেকে শুরু করে কৌশলগত সমন্বয় পর্যন্ত দুই দেশের অংশীদারিত্ব আরও দৃঢ় হচ্ছে।
শনিবার (৩০ আগস্ট) রাতে প্রকাশিত আনাদোলুর এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
চীনা বার্তা সংস্থা সিনহুয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পুতিন বলেন, রাশিয়া-চীনের সম্পর্ক এখন “অভূতপূর্ব উচ্চতায়” পৌঁছেছে। তিনি জানান, ২০২১ সালের পর থেকে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে।
তার ভাষায়, “রাশিয়ার প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার এখন চীন। আর রাশিয়া গত বছরে চীনের পঞ্চম বৃহত্তম বৈদেশিক অংশীদার হয়েছে।” তিনি বলেন, আগে বাণিজ্যে ডলার ব্যবহার হলেও এখন দুই দেশ প্রায় পুরোপুরি নিজ নিজ জাতীয় মুদ্রায় লেনদেন করছে। ডলার ও ইউরোর ব্যবহার কমে “পরিসংখ্যানগত ভুলের স্তরে” নেমে এসেছে।
পুতিন আরও জানান, রাশিয়া এখনো চীনের প্রধান জ্বালানি সরবরাহকারী। ২০১৯ সালে চালু হওয়া ‘পাওয়ার অব সাইবেরিয়া’ গ্যাস পাইপলাইন দিয়ে সরবরাহ ইতোমধ্যে ১০০ বিলিয়ন ঘনমিটার ছাড়িয়েছে।
তিনি বলেন, পূর্বাঞ্চলীয় গ্যাস পাইপলাইনের কাজ ২০২৭ সালে শেষ হলে রাশিয়া চীনে গাড়ি রপ্তানি ও জ্বালানির চাহিদা পূরণে আরও বড় ভূমিকা রাখবে, যা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও গভীর করবে। পুতিন বলেন, “আমার আসন্ন সফরে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সহযোগিতা আরও বিস্তৃত করার বিষয়ে আলোচনা হবেই।”
শুধু অর্থনীতিই নয়, কৌশলগত সম্পর্কও দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন পুতিন। তার ভাষায়, এই সমন্বয় “বিশ্ব রাজনীতির একটি প্রধান উপাদান।” জাতিসংঘ এবং গ্রুপ অব ফ্রেন্ডস ইন ডিফেন্স অব দ্য ইউএন চার্টারে চীন-রাশিয়ার যৌথ কাজকে তিনি গ্লোবাল সাউথকে শক্তিশালী করার একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বর্ণনা করেন।
দুই দেশই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারের পক্ষে, যাতে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার প্রতিনিধিত্ব বাড়ানো যায় এবং বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতা প্রতিফলিত হয়। পুতিন বলেন, “আমরা ব্রিকসের মধ্যে চীনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করছি, যাতে এটি আন্তর্জাতিক কাঠামোর অন্যতম প্রধান ভিত্তি হিসেবে প্রভাব বাড়াতে পারে।”
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাকে বৈষম্যমূলক আখ্যা দিয়ে পুতিন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকে সংস্কারের দাবি জানান। তিনি বেইজিংয়ের সঙ্গে একটি “নতুন আর্থিক ব্যবস্থা” গঠনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন, যা হবে ন্যায্য, উন্মুক্ত এবং “নব-উপনিবেশবাদী উদ্দেশ্যের ঊর্ধ্বে।”
উল্লেখ্য, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের আমন্ত্রণে রবিবার চার দিনের সফরে চীন যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। সফরের শুরুতে তিনি তিয়ানজিনে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন এবং পরে বেইজিংয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ও জাপানের সামরিক পরাজয়ের ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।