
কুড়িগ্রামের নদনদীর পানি ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলের কারণে বেড়ে গেছে। রোববার ভোর থেকে ভারতের দিক থেকে কালজানি নদীর স্রোতে হাজার হাজার গাছের গুঁড়ি ভেসে আসতে শুরু করে। দেখতে লালচে হওয়ায় অনেকেই এগুলোকে রক্ত চন্দন কাঠ ভেবে সংগ্রহ করছেন এবং তীরে তুলে বিক্রি শুরু করেছেন।
একেকটি গুঁড়ির দাম ২০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় হাকানো হচ্ছে। তবে জেলা বন বিভাগ জানাচ্ছে, এগুলো প্রকৃত চন্দন কাঠ নয়। “মানুষ বুঝে না কিনছে, এগুলো শ্বেত বা রক্ত চন্দন নয়,” বলেন বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাদিকুর রহমান।
মূলত রোববার (৫ অক্টোবর) ভোর থেকে কালজানি নদী হয়ে দুধকুমার নদী ও চিলমারীর ব্রক্ষ্মপুত্র নদে আসাম থেকে এসব কাঠ ভেসে আসে। স্থানীয়রা নৌকা ও বাঁশের ভেলায় নদীতে নেমে কাঠ ধরে তীরে তুলে বেচাকেনা শুরু করেছেন। কেউ সাঁতরে, কেউ বাঁশের ভেলায়, প্রতিযোগিতার মতো এই কাঠ সংগ্রহ করেছেন।
নাগেশ্বরীর রায়গঞ্জের দামাল গ্রামের আব্দুল মোতালেব (৬০) বলেন, “চারজন মিলে ৫০ ফুটের মতো লাল গাছ তুলেছি। দেখতে একদম চন্দনের মতো। দাম চেয়েছি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, তবে ১ লাখ ২০ হাজারে বিক্রি করতে রাজি আছি।”
অনেকে এই গুঁড়ি জ্বালানি কাঠ হিসেবেও কিনছেন। কালজানি নদীর পাড়ের আজাদ হোসেন (৫৫) বলেন, “আমার খড়ির গোলা আছে। একেকটি গুঁড়ি ১২ হাজার টাকায় কিনেছি। জ্বালানি কাঠ হিসেবে কাটব।” ছিটমাইলানী গ্রামের সবুজ মিয়া (৬২) বলেন, “রোববার রাত থেকে পরিবারসহ প্রায় ৫০০ মণ কাঠ তুলেছি। কিছু রান্নার কাজে রাখব, বাকিটা বিক্রি করব।”
বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাদিকুর রহমান জানান, “দীর্ঘদিন পানিতে থাকার কারণে কাঠগুলো রঙ পরিবর্তিত হয়ে লালচে দেখাচ্ছে। প্রকৃত চন্দন কাঠ বা শ্বেত/রক্ত চন্দনের কোনো নমুনা এতে নেই। ভারতে নদীতে ফেলে দেওয়া কাঠ স্রোতের টানে কুড়িগ্রামে ভেসে এসেছে।”
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও উদ্ভিদবিদ মির্জা নাসির উদ্দিন বলেন, “সার কাঠে প্রচুর ট্যানিন ও ফেনলিক যৌগ থাকে। পানিতে ভেজার সময় এই যৌগগুলো দ্রবীভূত হয়ে অক্সিজেনের সংস্পর্শে লালচে-বাদামি রঙ তৈরি করে। প্রকৃতপক্ষে এগুলো চন্দন কাঠ নয়।”