
ভারতের বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে বড় বিতর্ক দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, রাজ্যে পরিকল্পিতভাবে ভোটার তালিকা থেকে মুসলিম ও বিজেপিবিরোধী ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। বিরোধীদের দাবি, এভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি নিজেদের পক্ষে ফলাফল ঘোরাতে চাইছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত খসড়া তালিকা অনুযায়ী, প্রায় ৬৫ লাখ ভোটারের নাম নেই। নির্বাচন কমিশনের ব্যাখ্যা—এর এক–তৃতীয়াংশ মৃত, বাকিরা স্থান পরিবর্তন করেছেন বা একাধিকবার তালিকাভুক্ত ছিলেন। কিন্তু বিরোধীরা বলছে, এই ব্যাখ্যা বিশ্বাসযোগ্য নয়। প্রমাণ হিসেবে তারা দিল্লিতে কয়েকজন জীবিত মানুষকে হাজির করেছে, যাদের তালিকায় মৃত দেখানো হয়েছিল।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বিষয়টিকে ব্যঙ্গ করে বলেন, “আমি তো শুনলাম, আপনারা বেঁচে নেই?”
বিরোধীদের অভিযোগ, বাদ যাওয়া ভোটারের মধ্যে মুসলিম এবং বিজেপিবিরোধীদের সংখ্যাই বেশি। বিহারের বিরোধী নেতা তেজস্বী যাদব অভিযোগ করে বলেন, অনুমান করা হচ্ছে প্রতিটি আসনে ২৫–৩০ হাজার ভোটারের নাম কেটে ফেলা হয়েছে।
নিরপেক্ষ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, রাজ্যের দুই–তৃতীয়াংশ আসনে বাদ পড়া ভোটারের সংখ্যা গত নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের ব্যবধানের চেয়েও বেশি। তেজস্বীর ভাষায়, “আপনি কল্পনা করতে পারেন, জয়ের ব্যবধান খুবই কম ছিল।”
এদিকে ভোটার তালিকা যাচাই নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রমাণ হিসেবে ১১ ধরনের নথি গ্রহণ করার কথা থাকলেও প্রাথমিকভাবে ভোটার আইডি কার্ড ও আধার কার্ড রাখা হয়নি। অথচ গত এক দশকে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে শুরু করে মোবাইল সিম কেনা—সব ক্ষেত্রেই আধার কার্ড বাধ্যতামূলক করেছে মোদি সরকার। পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে নির্বাচন কমিশন আধারকে বৈধ নথি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে বাধ্য হয়।
কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, বাস্তবে তাদের শুরু থেকেই আধার গ্রহণ করতে হয়েছে, কারণ অনেক মানুষের কাছে তালিকাভুক্ত অন্য নথি ছিল না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার চাপ থাকায় অনেক কর্মকর্তা পুরোনো তালিকা বা পারিবারিক নথির ওপর নির্ভর করে ভোটারের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন, যা পুরো প্রক্রিয়াকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
বিরোধীরা অভিযোগ করছে, এই দ্রুত প্রক্রিয়ার মূল লক্ষ্য মুসলিম ও বিজেপিবিরোধী ভোটারদের ভোটাধিকার খর্ব করা। রাহুল গান্ধী দাবি করেছেন, মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকসহ সাম্প্রতিক কয়েকটি রাজ্যে বিরোধী জোটের অপ্রত্যাশিত পরাজয়ও একই ধরনের অনিয়মের ফল।
তবে বিজেপি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দলের নেতা অনুরাগ ঠাকুর বলেন, আসলে বিরোধী দলগুলো ভুয়া ভোটার তালিকাভুক্ত করেছে। তার দাবি, বিরোধীরা তাদের ‘অনুপ্রবেশকারীদের ভোটব্যাংক’ রক্ষা করতে চাইছে।
এতে সাধারণ ভোটারদের ভোগান্তি বেড়েছে। যারা রাজ্যের বাইরে কর্মরত, ডিজিটাল জ্ঞান কম বা ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ সীমিত—তাদের পক্ষে অভিযোগ জানানো প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সঞ্জয় কুমার জানান, কোনো কারণ ছাড়াই তার স্ত্রীর নাম তালিকা থেকে বাদ গেছে। তিনি সংশোধনের চেষ্টা করছেন, তবে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন—অসচ্ছল মানুষের ক্ষেত্রে এ ধরনের ভুল ঠিক করা প্রায় অসম্ভব হবে।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, আগস্টের শেষ নাগাদ ৭ কোটি ২০ লাখ ভোটারের মধ্যে ৯৮ শতাংশ নথি জমা পড়েছে। কিন্তু কোন নথি গ্রহণ করা হয়েছে—সে বিষয়ে কর্মকর্তারা স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। বিরোধীদের অভিযোগ নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যে শুনানি শুরু করেছে। নভেম্বরে ভোটের আগে যাচাই প্রক্রিয়া চললেও বিরোধীরা আশঙ্কা করছে, তত দিনে বিপুলসংখ্যক মুসলিম ও বিজেপিবিরোধী ভোটারের ভোটাধিকার হারিয়ে যাবে।