
বিদেশি সিনেমা কিংবা ওয়েব সিরিজ দেখার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড, এমন কঠোর বিধান বহুদিন ধরে কার্যকর রয়েছে উত্তর কোরিয়ায়। তবে সম্প্রতি জাতিসংঘ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, গত কয়েক বছরে এসব কারণে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে।
বাকি বিশ্বের সঙ্গে বিচ্ছিন্নভাবে পরিচালিত এই একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিকদের জন্য তথ্যপ্রাপ্তির পথ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। কিম জং উনের সরকার নাগরিকদের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে বিদেশি সিনেমা, টিভি শো বা যেকোনো ধরণের অডিওভিজ্যুয়াল কনটেন্ট দেখাকে ‘গুরুতর অপরাধ’ হিসেবে গণ্য করে।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফোলকার টুর্ক সতর্ক করে বলেন, "উত্তর কোরিয়ায় এভাবে চলতে থাকলে সেখানকার মানুষদের পরিণতি আরও খারাপের দিকে যাবে, দীর্ঘদিন ধরে যে নিপীড়ন সহ্য করে আসছিল, তার বাড়তেই থাকবে।"
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে ২০১৩ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে আসা ৩০০ জনের বেশি মানুষের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে। তাদের ভাষ্যমতে, ২০২০ সালের পর থেকে বিদেশি কনটেন্ট দেখার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের হার বেড়ে গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এসব মৃত্যুদণ্ড বেশিরভাগ সময় জনসমক্ষে গুলি করে কার্যকর করা হয়। উদ্দেশ্য একটাই, জনগণের মধ্যে ভয় ছড়িয়ে দেওয়া, যাতে কেউ রাষ্ট্রনির্ধারিত আইন অমান্য করার সাহস না পায়।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আরও উঠে আসে, ২০১৫ সালের পর থেকে অন্তত ছয়টি নতুন আইন জারি করেছে পিয়ংইয়ং, যেগুলোর বেশ কয়েকটিতে বিদেশি মিডিয়া কনটেন্ট দেখা বা ছড়ানোর মতো অপরাধের জন্য সরাসরি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
এই নীতির পেছনে রয়েছে উত্তর কোরীয় শাসকের কৌশল, জনগণকে বাইরের বিশ্বের সংস্কৃতি, চিন্তাধারা বা তথ্য থেকে যতটা সম্ভব বিচ্ছিন্ন রাখা। কিম জং উনের সরকারের লক্ষ্য হলো, রাষ্ট্রীয় আদর্শ ও প্রচারণার বাইরে কোনো মতাদর্শ যেন প্রবেশ করতে না পারে।