
রাতজুড়ে ভয়াবহ বিমান ও ড্রোন হামলায় আবারও অন্ধকারে ডুবে গেল ইউক্রেনের বহু অঞ্চল। শুক্রবার গভীর রাতে চালানো এই ব্যাপক হামলায় অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। যুদ্ধের চার বছর পূর্ণ হতে চললেও শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগে কোনো বাস্তব অগ্রগতি না থাকায় সংঘাত আরও জটিল হয়ে উঠছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, রাশিয়া এক রাতেই আকাশ, স্থল ও সমুদ্রপথে মোট ৫০৩টি হামলা চালায়। এর মধ্যে ছিল ৪৫টি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ৪৫৮টি ড্রোন। ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী ৪০৬টি ড্রোন ভূপাতিত করতে সক্ষম হলেও মাত্র ৯টি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা যায়। অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানায় একাধিক অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে।
প্রধান আঘাত হানা হয় গ্যাস ও বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ জ্বালানি অবকাঠামোতে। এর ফলে রাজধানী কিয়েভসহ বহু এলাকায় ব্ল্যাকআউট দেখা দেয়।
দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জাপোরিঝিয়া প্রদেশের গভর্নর ইভান ফেদোরভ জানান, হামলায় তিনজন নিহত ও ছয়জন আহত হয়েছেন, এবং কয়েকটি আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দোনেৎস্কের দুটি জেলায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। খেরসন প্রদেশে হামলায় দুজন নিহত ও অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন গভর্নর ওলেক্সান্দর প্রোকুদিন। সেখানে বহু তলা ভবন, বাসাবাড়ি ও গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কিয়েভ অঞ্চলের গভর্নর মাইকোলা কালাশনিক জানান, ভিশহোরদ জেলায় এক নারী আহত হয়েছেন এবং হামলায় বেসামরিক এলাকা ও বিদ্যুৎ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দিনিপ্রো অঞ্চলে একটি ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তিনজন নিহত ও ১১ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে শিশুও রয়েছে।
পলতাভা অঞ্চলের গভর্নর ভলোদিমির কোহুত বলেন, সেখানে ‘বৃহৎ মাত্রার হামলা’ হয়েছে। একজন আহত হয়েছেন এবং বিদ্যুৎ বিভ্রাট মোকাবিলায় রোলিং ব্ল্যাকআউট কার্যকর করা হয়েছে।
এই হামলার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি আহ্বান জানান, শীত শুরু হওয়ার আগেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও দেশটির সম্পদ জব্দ করার জন্য। তিনি বলেন, “রাশিয়ার হামলাগুলো দেখিয়ে দিচ্ছে, চাপ আরও বাড়াতে হবে। রুশ পারমাণবিক খাত এখনো নিষেধাজ্ঞার বাইরে, তাদের সামরিক শিল্প পশ্চিমা ইলেকট্রনিক্স পাচ্ছে, তেল ও গ্যাস বাণিজ্যেও আরও কড়াকড়ি দরকার।”
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা আকাশ, স্থল ও সমুদ্রপথে ‘উচ্চনির্ভুল দূরপাল্লার অস্ত্র’ ব্যবহার করে হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
দোনেৎস্কের ফ্রন্টলাইনের শহর পোকরোভস্কে এখনো তীব্র লড়াই চলছে। শহরটির নিয়ন্ত্রণ নিতে সেখানে বিপুলসংখ্যক রুশ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। ইউক্রেনের সেনাপ্রধান ওলেক্সান্দর সিরস্কি জানিয়েছেন, তাদের বাহিনী শহরের পূর্বাংশে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে।
পূর্ব ইউরোপে শীতের প্রান্তে এসে রাশিয়ার এমন ধারাবাহিক হামলায় ইউক্রেনজুড়ে উদ্বেগ ও মানবিক সংকট আরও গভীর হচ্ছে।