
দলীয় চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে নিজেদের প্রেরণার উৎস হিসেবে উল্লেখ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, "কত রোগ-শোক! সংকটের মধ্যেও এই দলকে, এই দেশকে, এই মৃত্তিকাকে ছেড়ে যাননি। কখনোই পশ্চাৎপদ হননি। এটা আমাদের কত বড়ো অহংকার; তার মতো নেতৃত্ব আমরা পেয়েছি।"
বুধবার (২৬ নভেম্বর) নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের আয়োজিত 'বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সুস্থতা কামনা' অনুষ্ঠানে রিজভী এই মন্তব্য করেন।
রিজভী আরও বলেন, খালেদা জিয়া আমাদেরকে অন্ধকারের মাঝেও আলোর পথ দেখিয়েছেন। তিনি শিখিয়েছেন সংকটের সময় মাথা উঁচু করে থাকা, প্রতিপক্ষের সঙ্গে সংযমীভাবে কথা বলা এবং ঝঞ্ঝাটপূর্ণ সময়েও ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাওয়ার কৌশল।
তিনি অভিযোগ করেন, সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে কৃত্রিমভাবে অসুস্থ করেছেন। "এটা তার স্বাভাবিক অসুস্থতা নয়। একজন মহিলা পায়ে হেঁটে জেলখানায় প্রবেশ করেছেন একটি অন্যায়, অসত্য, মিথ্যা মামলায়। জেলে নেওয়ার পর প্রমাণ ছাড়াই নানা উপায়ে তাকে অসুস্থ করা হয়েছে।"
রিজভী উল্লেখ করেন, খালেদা জিয়া স্বামী, বাড়ি, সবকিছু হারিয়েছেন। "চোখের সামনে সন্তানদের নির্যাতন দেখেছেন, তারপরও তিনি এই দেশ-মানুষ, মাটি, পানি ছেড়ে যাননি। এক অদ্ভুত বিশাল হৃদয় নিয়ে, অদ্ভুত দেশপ্রেম নিয়ে, স্বামীর রেখে যাওয়া বাংলাদেশকে রক্ষার অঙ্গীকার নিয়ে তিনি থেকেছেন। অথচ আরেকজন একটু সমস্যা হলেই পালিয়ে গেছে। দেশ ছেড়ে চলে গেছে। সময় আসতেই সবার আগে লাফ দিয়ে চলে গেছে তার ছেলের কাছে। এরপর জনতার রুদ্ররোষ দেখে সবকিছু ছেড়ে এখান থেকেও পালিয়েছে।"
রিজভী বলেন, বেগম জিয়াকে তো পালাতে হয়নি। তিনি উল্লেখ করেন, "আজ দেখলাম অগ্রণী ব্যাংকের ভল্টে ৮৩২ ভরি সোনা, শেখ হাসিনার দুটি ভল্টে! কত বড় চোর হলে এসব সম্ভব? ও তো অবশ্যই পালাবে। সে জানে সে চোর। দেশনেত্রী বেগম জিয়ার ব্যাংকে কোনো সোনা পাওয়া যায়নি।" তিনি আরও বলেন, "শেখ হাসিনা ও তার লোকেরা বড় বড় কথা বলত, বঙ্গবন্ধুর কন্যা দেশ ছেড়ে পালায় না! কিন্তু যাদের চরিত্র চোরের, ডাকাতের, দস্যুর; তারা তো কাপুরুষ। আর যখন ডাকাত-দস্যু-চোররা ধাওয়া খায়, তখন সবকিছু ফেলেই পালাতে হয়। কিছু নিয়ে যায়, কিছু ফেলে রেখে যায়। ওটা নেওয়ার সুযোগ পায়নি।"
রিজভী অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হরিলুটের পর শেখ হাসিনা দেশকে দুর্বল করে অন্য কারোর আজ্ঞাবাহী বানাতে চেয়েছিলেন। তবে "দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অটুট মনোবল এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে জাতিকে যেভাবে ঐক্যবদ্ধ রাখা হয়েছে, তার ফলে শেখ হাসিনা কিছুই করতে পারেননি। অবশেষে তাকে পালাতে হয়েছে।"
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ১৫ মাস ধরে দেশ পরিচালনা করছে। "আজ ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বলছে, বাংলাদেশের ছয় কোটি মানুষ দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে, তিন কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে। কেন হবে এটা? এটা আমাদের কাম্য নয়। জনগণও এটা চায় না।"
রিজভী আরও আশা প্রকাশ করেন, আগামী নির্বাচন রমজানের আগে ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হবে এবং এটি অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। "সরকারও যেটা অঙ্গীকার করেছে, সেই অনুযায়ী অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার অধিকার নিশ্চিত হোক। সাড়ে দশ বছর শেখ হাসিনা জনগণের ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিলেন, এখান থেকে উত্তরণ ঘটাবে এই অন্তর্বর্তী সরকার। তারা নিরপেক্ষ সরকারের দায়িত্ব পালন করছেন, পালন করবেন।"