
ইউক্রেন ও ইসরায়েলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে ইরানের এক তেল ব্যবসায়ী ও চারটি কোম্পানির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাজ্য। বৃহস্পতিবার এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ব্রিটেনের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক মন্ত্রী হ্যামিশ ফ্যালকনার।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইরানি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হোসেইন শামখানির ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং তার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। একইসঙ্গে শিপিং, পেট্রোকেমিক্যাল ও আর্থিক খাত সংশ্লিষ্ট কয়েকটি কোম্পানির সম্পদও জব্দ করা হয়েছে। অভিযোগ, এই কোম্পানিগুলো শামখানির পক্ষে বা তার নির্দেশে কাজ করছে এবং বিদেশে ইরানের রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে ভূমিকা রাখছে।
ব্রিটিশ মন্ত্রী ফ্যালকনার বলেন, ইরান এমন কিছু বাণিজ্য নেটওয়ার্ক ও প্রতিষ্ঠানকে কাজে লাগাচ্ছে যেগুলো তাদের বিদেশে অস্থিতিশীল কার্যক্রম চালাতে সহায়তা করছে। এসবের মধ্যে রয়েছে আঞ্চলিক প্রক্সি গোষ্ঠীগুলো, তাদের সহযোগী সংস্থাগুলো এবং ব্রিটিশ ভূখণ্ডে ইরানের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত হুমকি সৃষ্টিকারীরাও।
এদিকে লন্ডনে অবস্থিত ইরানি দূতাবাস এই পদক্ষেপের কড়া নিন্দা জানিয়েছে। তারা এটিকে একতরফা, অবৈধ ও ভিত্তিহীন অভিযোগ বলে অভিহিত করেছে। উল্লেখ্য, নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা মোহাম্মদ হোসেইন শামখানি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির এক উপদেষ্টার ছেলে। রয়টার্স জানিয়েছে, এ বিষয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এর আগে গত মাসেও যুক্তরাষ্ট্র শামখানির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ওয়াশিংটনের অভিযোগ ছিল, তিনি একটি মধ্যস্থতাকারী নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে বিপুলসংখ্যক কনটেইনার জাহাজ ও ট্যাঙ্কারের নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন, যেগুলোর মাধ্যমে ইরানি ও রুশ তেলসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি হয়। চলতি বছরের জুলাই মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
ব্রিটিশ সরকার বলছে, এই নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে তারা একটি বার্তা দিচ্ছে যে, ইরানের পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্যে হুমকি তৈরি বা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির যে কোনো প্রচেষ্টা কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। তবে সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ আইনপ্রণেতারা সতর্ক করে বলেছেন, ইরান এখনো রাশিয়া বা চীনের মতো হুমকির মাত্রায় না পৌঁছালেও এটি একটি ক্রমবর্ধমান এবং বহুমুখী হুমকি হয়ে উঠছে। তাদের মতে, ব্রিটিশ সরকার এখনো এই হুমকি মোকাবিলায় যথাযথ প্রস্তুতি নিতে পারেনি।
আইনপ্রণেতারা আরও বলেছেন, ইরানি হুমকির মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী ও ইহুদি সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে শারীরিক হামলা ও সম্ভাব্য হত্যাকাণ্ড, গুপ্তচরবৃত্তি, সাইবার আক্রমণ এবং পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টাও।
তবে ইরান এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, যুক্তরাজ্যের এই পদক্ষেপ ভিত্তিহীন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং শত্রুতামূলক।
সূত্র: রয়টার্স