
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর পদত্যাগ করাই হবে ‘বুদ্ধিমানের কাজ’। ট্রাম্পের মন্তব্যের জবাবে মাদুরো প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, হুমকি না দিয়ে তার উচিত নিজের দেশের সমস্যা সমাধানে মনোযোগ দেওয়া। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে মাদুরো বলেন, “অর্থনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুতে নিজের দেশের দিকে মন দিলে তিনি ভালো করতেন। বিশ্বে ভালো থাকতে চাইলে নিজের দেশের কাজই সামলানো উচিত।”
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) ফ্লোরিডায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ১২ বছর ক্ষমতায় থাকা মাদুরো পদ ছাড়বেন কি না, তা তার নিজের সিদ্ধান্ত। তবে ট্রাম্প বলেন, “আমি মনে করি, সেটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।” তিনি আরও হুঁশিয়ারি দেন, মাদুরো যদি কঠোর অবস্থান নেন, তা তার জন্য শেষবারের মতো কঠোর পদক্ষেপ হিসেবে প্রমাণিত হবে। ট্রাম্পের এই ঘোষণার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি ঘিরে নৌ অবরোধ জোরদার করেছে।
এদিকে, ভেনেজুয়েলার প্রধান মিত্র রাশিয়া মাদুরো সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও মস্কো এই অবস্থান নিয়েছে মঙ্গলবারের জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের আগের দিন। বৈঠকে ভেনেজুয়েলার ক্রমবর্ধমান সংকট আলোচনা করার কথা।
রাশিয়া ও ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ফোনালাপে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করা হয়। এতে অন্তর্ভুক্ত ছিল কথিত মাদক পাচারের অভিযোগে নৌযানে হামলা এবং দুটি তেলবাহী ট্যাংকার জব্দ করা।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সের্গেই লাভরভ ও ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান গিল ক্যারিবীয় সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রম নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই পদক্ষেপগুলো অঞ্চলের জন্য গুরুতর পরিণতি ডেকে আনতে পারে এবং আন্তর্জাতিক নৌ চলাচলকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাশিয়া ভেনেজুয়েলার নেতৃত্ব ও জনগণের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ও সংহতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। উভয় দেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে, বিশেষ করে জাতিসংঘে সমন্বিতভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে। ভেনেজুয়েলার আরেক মিত্র চীনও নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডাকার পক্ষে সমর্থন দিয়েছে।
টেলিগ্রামে দেওয়া এক বার্তায় ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান গিল জানান, তিনি ও সের্গেই লাভরভ ক্যারিবীয় অঞ্চলে সংঘটিত ‘আগ্রাসন ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রকাশ্য লঙ্ঘন’ নিয়ে আলোচনা করেছেন। এতে জাহাজে হামলা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের চালানো বেআইনি জলদস্যুতা কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত। গিল বলেন, এসব বৈরী কার্যক্রমের মুখে মস্কোর ‘পূর্ণ সমর্থন’ পুনর্ব্যক্ত করেছেন লাভরভ।
যুক্তরাষ্ট্র দাবি করছে, সেপ্টেম্বর থেকে ক্যারিবীয় সাগর ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে যেসব নৌযানে হামলা চালানো হয়েছে, সেগুলো মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত ছিল। তবে এ দাবির জন্য কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। এসব অভিযানে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে জেলও ছিলেন।
ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ভেনিজুয়েলায় যাতায়াতকারী ‘নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেলবাহী জাহাজের’ বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ করা হবে। ট্রাম্পের অভিযোগ, মাদুরোর অধীনে কারাকাস তেলের অর্থ ‘মাদক সন্ত্রাস, মানব পাচার, হত্যা ও অপহরণে’ ব্যবহৃত হচ্ছে। তিনি বলেন, “ভেনেজুয়েলা যুক্তরাষ্ট্রের সব তেল নিয়ে নিয়েছে। এটি দেশটির তেল খাত জাতীয়করণের প্রতি ইঙ্গিত।”
জবাবে কারাকাস আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, ওয়াশিংটন সরকার দেশ পরিবর্তনের চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘আন্তর্জাতিক জলদস্যুতা’ অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে ভেনেজুয়েলা।