
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্ধারিত বৈঠক স্থগিত হওয়ার ঠিক একদিন পরই রাশিয়া বড় পরিসরে পারমাণবিক মহড়া চালিয়েছে। বুধবার ক্রেমলিনের ঘোষণা অনুযায়ী, মহড়ায় আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করা হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত আঘাত করতে সক্ষম। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর দিয়েছে।
রাশিয়ার সামরিক প্রধান জেনারেল ভ্যালেরি গেরাসিমভ মহড়ার বিস্তারিত তথ্য প্রেসিডেন্ট পুতিনকে জানিয়েছেন এবং সেই ভিডিও ক্রেমলিন প্রকাশ করেছে। ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পুতিন বারবার রাশিয়ার পারমাণবিক সক্ষমতার কথাই মনে করিয়ে দিয়েছেন। পশ্চিমা দেশগুলো এগুলোকে একটি সতর্কবার্তা হিসেবে দেখছে। একই সঙ্গে ন্যাটোও প্রতিরোধমূলক পারমাণবিক মহড়া চালাচ্ছে।
গত সপ্তাহে পুতিন ও ট্রাম্পের মধ্যে ফোনালাপের পর জানা গিয়েছিল, তারা শিগগিরই হাঙ্গেরিতে বৈঠক করবেন। তবে সোমবার দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আলোচনার পর হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, এখনই ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের কোনো পরিকল্পনা নেই। ট্রাম্প বলেছেন, “আমি বৃথা বৈঠক চাই না।” রাশিয়াও একই মনোভাব প্রকাশ করেছে এবং জানিয়েছে, অর্থবহ আলোচনার জন্য যথাযথ প্রস্তুতি প্রয়োজন।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, “তারিখ এখনও নির্ধারিত হয়নি। তবে বৈঠকের আগে গভীর প্রস্তুতি প্রয়োজন, যা সময়সাপেক্ষ। প্রস্তুতি প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।”
রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে, শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস অঞ্চলের পুরো নিয়ন্ত্রণ রাশিয়ার হাতে দিতে হবে। এই শর্ত কার্যত ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান। ট্রাম্প দুই পক্ষকে বর্তমান ফ্রন্টলাইনের ভিত্তিতে যুদ্ধবিরতির আহ্বান করেছিলেন।
রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আরআইএ-কে জানিয়েছেন, বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে এবং বড় কোনো বাধা দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে, মঙ্গলবার রাতভর রাশিয়া ও ইউক্রেন একে অপরের ওপর ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের তথ্যানুযায়ী, কিয়েভ ও আশপাশের এলাকায় ছয়জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিভ্রাটও দেখা দিয়েছে।
উত্তর প্রতিরোধ হিসেবে, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ফরাসি-ব্রিটিশ নির্মিত স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় ব্রায়ানস্ক অঞ্চলের একটি রাসায়নিক কারখানায় হামলা চালিয়েছে।
পুতিন-ট্রাম্প বৈঠক স্থগিত হওয়ার খবরের পর ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা খাতে শেয়ারমূল্য বেড়ে গেছে। ইউরোপের অধিকাংশ দেশ কিয়েভের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়ে সামরিক ব্যয় বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বুধবার সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এই বৈঠক হবে দেশের অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানি সাবের কারখানায়। জেলেনস্কি বলেন, “রাশিয়ার কূটনীতি নিয়ে কোনও অর্থপূর্ণ আলোচনা সম্ভব নয়, যতক্ষণ না রুশ নেতৃত্ব বাস্তব সমস্যার মুখোমুখি হয়। আর তা সম্ভব কেবল নিষেধাজ্ঞা, দূরপাল্লার অস্ত্র সরবরাহ এবং আন্তর্জাতিক সমন্বিত কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে।”
রুশ হামলার কারণে ইউক্রেনে জরুরি বিদ্যুৎ বিভ্রাট চলছে। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা আন্তর্জাতিক সহযোগীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, শীতের আগে অতিরিক্ত জ্বালানি সহায়তা না পেলে দেশটি মানবিক সংকটে পড়বে।