
অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে ইঙ্গিতপূর্ণ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তার স্ট্যাটাসের কমেন্ট বক্স থেকে পাওয়া একটি স্ক্রিনশট শেয়ার করে তিনি দাবি করেছেন যে, মওদূদীবাদীরা ‘মব’ আকারে তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করছে।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১১টায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইল থেকে এই স্ট্যাটাস দেন মাহফুজ আলম। তিনি লেখেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আর কোনো মওদূদীবাদী প্রক্সি রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন নেই। ইতোমধ্যে অর্ধ ডজন প্রক্সি রাজনৈতিক দল কাজ করছে, তাই নতুন কিছু যোগ করার দরকার নেই।
তিনি আরও বলেছেন, "বরং নতুন করে সংজ্ঞায়িত করো, নতুন করে চিনতে শেখো এবং নিজেদের অবস্থান পুনর্দাবি করো।"
‘মওদূদীবাদী’ শব্দটি ব্যবহারের মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের অনুসারীদের ইঙ্গিত করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ইসলামী চিন্তাবিদ সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদীর আদর্শে অনুপ্রাণিত এই দলটির বিরুদ্ধে প্রায়ই অন্য দলের স্বার্থে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে।
মাহফুজ আলম তার স্ট্যাটাসের সঙ্গে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের কথোপকথনের স্ক্রিনশট শেয়ার করেন, যেখানে দেখা যায় একাধিক ব্যক্তি তাকে ‘শায়েস্তা’ করার পরিকল্পনা করছে। স্ক্রিনশটে ১১ মে তারিখের কথোপকথন দেখা যায়। একজন ব্যবহারকারী মাহফুজ আলমের একটি ফেসবুক পোস্টের লিংক শেয়ার করে তাকে ‘বদমাশ’ আখ্যা দেন। আলোচনা চলাকালে সালাহ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন, "তবে সল্যুশন একটাই, এরে মভ (মব) করে ফেলতে হবে..." এছাড়া হাফিজুর রহমান নামের আরেক ব্যক্তি বলেছেন, "ওরে একটু সাইজ করা দরকার। এনাফ হইছে।"

স্ক্রিনশটে উল্লেখিত ফেসবুক পোস্টটি মাহফুজ আলম ১১ মে দিয়েছিলেন, যখন অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই মাসের অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেয়। সেই সময় জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) কয়েকটি দলের আন্দোলনে জামায়াত-শিবিরের নেতারা জাতীয় সংগীতের বিরুদ্ধে কথা বলার অভিযোগ ওঠে।
মাহফুজ আলমের ১১ মে’র স্ট্যাটাসে ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধ, পাকিস্তানপন্থা এবং জুলাই মাসের ঘটনা নিয়ে কঠোর মন্তব্য ছিল। নেটিজেনরা মনে করেন, এই স্ট্যাটাসই জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের ক্ষুব্ধ করেছে।

মাহফুজ আলমের এই স্ট্যাটাসের পেছনে শুক্রবার লন্ডনে তার ওপর হামলার ঘটনা প্রভাব ফেলতে পারে। ওই দিন লন্ডনে একটি সেমিনার থেকে বের হওয়ার সময় নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন মাহফুজ। এ সময় গাড়ি লক্ষ্য করে ডিম ছোড়া হয়।
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় শনিবার রাতে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস দেন। তিনি সরকারের ভেতরে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয় থাকার কারণে মাহফুজকে ‘হত্যাযোগ্য’ করে তোলার অভিযোগ তুলেছেন।
নাহিদ লেখেন, “মাহফুজ আলমের ওপর হামলার ঘটনায় কোনোবারই অন্তর্বর্তী সরকার কোনো স্ট্রং পদক্ষেপ নেয় নাই। কোনো শক্ত বার্তা দেয় নাই। কোনো উপদেষ্টা বা প্রেস সচিব একটা মন্তব্যও কখনো করে নাই। সরকার ও উপদেষ্টা পরিষদের ভেতরেও মাহফুজ আলমকে অপদস্থ ও হত্যার মৌন সম্মতি তৈরি করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই সরকার ও উপদেষ্টাগণ মাহফুজদের যথেচ্ছা ব্যবহার করে এখন মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। আমরা এগুলা মনে রাখছি। রাজনৈতিকভাবে এর জবাব দেওয়া হবে।”